Скачать или смотреть দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে নায়িকা রোজিনার নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ

দর্শনার্থীদের মন কাড়ছে রোজিনার নির্মিত দশ গম্বুজ বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মসজিদ

আশির দশকের বাংলার জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা রোজিনা।বাংলা চলচ্চিত্রে একের পর এক উপহার দিয়েছেন সুপারহিট সিনেমা।গুণী এই নায়িকার শৈশব-কৈশর কেটেছে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লা পাড়া গ্রামে।

শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের জুড়ান মোল্লার পাড়ায় প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করেছেন একটি দশ গম্বুজ বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।তুরস্কের নকশায় করা মসজিদটির নাম দিয়েছেন তিনি নিজের মায়ের নামে-'দশ গম্বুজ মা খাদিজা জামে মসজিদ'।টানা দুই বছর নির্মাণ কাজ শেষে ২০২২ সালের ১ এপ্রিল জুম্মার নামাজ আদায়ের মধ্য দিয়ে এ মসজিদের উদ্বোধন করা হয়।উদ্বোধনের পর থেকেই ইসলামের আলো ছড়াচ্ছে এই দশ গম্বুজ বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি।প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ,কোরআন তেলওয়াত ও ছোট ছোট শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয় মসজিদে।

জানা গেছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলার ভবানীপুরে চিত্রনায়িকা রোজিনার বাবার বাড়ি।আর গোয়ালন্দে তার নানার বাড়ি।বাবার বাড়ি রাজবাড়ীতে হলেও তার শৈশব-কৈশর কেটেছে গোয়ালন্দের নানা বাড়িতে।বাড়ির বড় সন্তান হিসেবে মসজিদের জমিটি রোজিনার মায়ের নামে দেন তার নানা।মায়ের সূত্র ধরে সেই জমির মালিক হন রোজিনা।রোজিনার ইচ্ছা ছিলো তার মায়ের দেওয়া জমিতে তিনি একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করবেন।

তাই ২০১৯ সালে মসজিদের জন্য জমিটি ওয়াকফ করে দেন তিনি।২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি নির্মাণকাজ শুরু হয়।দুটি মিনারসহ ১০টি গম্বুজ দিয়ে মসজিদটি বানানো হয়েছে।প্রায় ৭ শতাংশ জায়গার ওপর ১ হাজার ৬০০ বর্গফুটের দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদটি নির্মাণে খরচ হয়েছে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিলোমিটার পাকা সড়ক ধরে সামনে এগুলেই চোখে পড়বে দশ গম্বুজ বিশিষ্ট মা খাদিজা জামে মসজিদ।মসজিদের সামনে রয়েছে দুইটি বড় মিনার।রয়েছে ছোটবড় ১০ টি গম্বুজ।মসজিদটির নকশা করা হয়েছে তুরস্কের বিভিন্ন মসজিদের আদলে।মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে দামি টাইলস, মূল্যবান পাথর ও নানা কারুকার্য।
অসাধারণ নির্মাণ শৈলী,মসজিদের রং, লাইটিং ও এর অবস্থান দূর থেকে কাছে টানে দর্শনার্থী ও মুসল্লীদের।নির্মাণের পর থেকে প্রতিদিন এই মসজিদ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন দর্শনার্থীরা।বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত থেকে মসজিদের ভেতর ও বাহিরে থাকে অসাধারণ লাইটিং।

সাদ্দাম হোসেন নামের এক দর্শনার্থী বলেন, গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে নায়িকা রোজিনা তার নিজ অর্থায়নে একটি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ করেছে শুনেছিলাম।মানুষের মুখে শুনেছিলাম মসজিদটি অনেক সুন্দর ও দৃষ্টি নন্দন।আমার বাসা থেকে মসজিটি ৩ কিলোমিটার দূরে।আজ শুক্রবার মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করলাম ও মসজিদটি ঘুরে ঘুরে দেখলাম।অনেক ভালো লাগলো।

মোক্তার মাহমুদ নামের এক স্থানীয় মুসল্লী বলেন, চিত্র নায়িকা রোজিনা আমাদের এলাকায় এই মসজিদটি করে দেওয়ায় আমরা গর্ববোধ করি।আগে আমাদের নামাজ পড়তে অনেক দূরে যেতে হতো।অনেক সময় দেখা যেতো দূরের মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে নামাজ শেষ হয়ে যেতো,নামাজ পেতাম না।এখন আমাদের এলাকায় মসজিদ হওয়ায় আমরা খুব খুশি।মসজিদটি দৃষ্টি নন্দন হওয়ায় এখানে অনেকে দূর দূরান্ত থেকে অনেকে নামাজ পড়তে আসে।আমরা অনেক সময় মুসল্লীদের জায়গা দিতে পারি না। এটি দশ গম্বুজ বিশিষ্ট মা খাদিজা জামে মসজিদ নামে সবার কাছে পরিচিত।

ফজলু নামের এক স্থানীয় মুসল্লী বলেন,আমাদের এই মসজিদটি চিত্রনায়িকা রোজিনা ম্যাডাম তার নিজ অর্থায়নে বানিয়ে দিছে।মসজিদের এই জায়গাটিও তার ছিলো।আমরা এলাকাবাসি এই সুন্দর মসজিদটি পেয়ে অনেক খুশি।আমরা এলাকাবাসী সবাই এই মসজিদে নামাজ পড়ি। যারা কোন দিন নামাজ পড়তো না তারাও এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি পেয়ে খুশি।তারাও এখন নামাজ পড়তে আসে।

শহিন নামের অপর এক স্থানীয় মুসল্লী বলেন, চিত্র নায়িকা রোজিনা আপা আমাদের এলাকায় এই সুন্দর মসজিদটি নির্মাণ করে দিয়েছেন।আমরা এক বছর এই মসজিদে নামাজ আদায় করছি।নির্মাণের পর থেকেই মসজিদে অনেক মুসল্লী হয়।শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করা মসজিদে নামাজ পড়তে আসেন।আমরা রোজার মাসে মসজিদে ইফতার করি,তারাবীহর নামাজ আদায় করি।গোয়ালন্দের মধ্যে এটি দৃষ্টিনন্দন ও সুন্দর মসজিদ। আমরা রোজিনা আপাকে ধন্যবাদ জানায়।

দশ গম্বুজ মা খাদিজা জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আব্দুল আহাদ বলেন,মসজিদের শুরু থেকেই আমি এখানে ইমামতি করি।এলাকার জন্য মসজিদটি খুব প্রয়োজন ছিলো।কারণ আশেপাশে কোন মসজিদ ছিলো না।মসজিদটি হওয়ায় এলাকার মুসল্লীদের সুবিধা হয়েছে।দূর দূরান্ত থেকে মসজিদে মুসল্লীরা নামাজ পড়তে আসে।মসজিদে শুরু থেকেই এখানে ফজর,যোহর ও এশার নামাজের পরে শিশু ও বয়স্কদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া হয়।এই মসজিদটি যিনি নির্মাণ করেছেন চিত্র নায়িকা রোজিনা আপাকে এই মসজিদ নির্মাণের ওসিলাই আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুক।

দশ গম্বুজ মা খাদিজা জামে মসজিদের খতিব
মওলানা এহেতেশামুলহক আব্বাসী বলেন,এই মসজিদ নির্মাণের শুরু থেকেই আমি এখানে জুম্মার নামাজ পড়ায়।এই মসজিদটি অনেক সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন।অনান্য মসজিদ থেকে এই মসজিদের মুসল্লী অনেক বেশি হয়।প্রতি শুক্রবার রাজবাড়ী জেলাসহ আশেপাশের কয়েক জেলার মানুষ এই মসজিদটি দেখতে আসে ও এখানে জুম্মার নামাজ আদায় করে।

প্রসঙ্গত,২০২০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারী দশ গম্বুজ বিশিষ্ট মা খাদিজা জামে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যায়ে মসজিদটি নির্মাণ করেন চিত্র নায়িকা রোজিনা।দুই বছর নির্মাণ কাজ শেষে ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল মসজিদটি উদ্বোধন করা হয়।মসজিদটির উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী,চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি চিত্র নায়িক ইলিয়াস কাঞ্চন,গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা মুন্সী, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুল হক খান,পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম মন্ডল সহ প্রমুখ।