Скачать или смотреть যেভাবে দখল হলো শাহবাগ ।। ৫ আগস্ট,২০২৪

শাহবাগ দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ এক পয়েন্ট। তাইতো শাহবাগ নিয়ে ভয়টাও ছিলো বেশি। ৫ আগস্ট সকাল সকাল শাহবাগের দিকে রওয়ানা হই। পথে বাধার মুখে পড়ি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে। সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট থেকে ফিরেয়ে দেয়া হলো আমাদের। বলা হলো, কাকরাইল মসজিদ হয়ে ঢাকা ক্লাবের সামনে দিয়ে ঢুকতে।

চলছিলো গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ভাবলাম প্রকৃতিও বুঝি আজ ভিন্ন কিছু চাইছে। যাইহোক, শাহবাগ ঢোকার পথে ঢাকা ক্লাবের সামনে ১০ থেকে ১৫ জন, আবার ঠিক উল্টোপাশে শিশু পার্কের সামনে সমপরিমাণ লোকজন দেখলাম। ভাবলাম, এই ৩০/৪০ জন দিয়ে কি করে সম্ভব?

শাহবাগে পৌঁছে দেখি পুলিশের কড়া টহল। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর কানে ভেসে আসলো মুহূর্মুহূ গুলি আর সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ। শব্দ শুনে আন্দাজ করলাম শহীদ মিনার এবং চানখারপোল রণক্ষেত্র। কিছুক্ষণ বাদে প্রত্যক্ষদর্শী এক রিকশাচালককে পেলাম। জিজ্ঞেস করতেই চোখ থেকে পানি ছেড়ে বললো, 'মামা ভোরের দিকে শহীদ মিনারে একটা ছেলের ঠিক পেট বরাবর গুলি করছে পুলিশ। চোখের সামনেই মেরে গেলো ছেলেটা।'

হঠাৎ শাহবাগ থানা থেকে পরপর বেরিয়ে গেলো দুই দুটি প্রিজন ভ্যান। খুব দ্রুত টান দিলো গাড়ি দুটো। ভিডিও করার মতো সময় পাইনি। অথবা, ভিডিও করার কথা ভাবতেই পারিনি। কেননা, মনে হচ্ছিলো গাড়ি দুটো এখনই বিস্ফোরিত হবে। ভেতর থেকে ঠিক বাঘের গর্জন শুনছিলাম। ভেকরে আটককৃতরা চিৎকার করে ফাটিয়ে ফেলছিলো আকাশ বাতাস। গাড়ি দুটো দ্রুত টেনে ঢুকে গেলো মিন্টো রোডের দিকে।

ততক্ষণে শাহবাগ এলাকার বেশকিছু ফুটেজ জমে গেছে মোবাইল ফোন ও ক্যামেরায়। অফিসে ফোন দিয়ে আপডেট জানালাম। অফিসের উত্তর যতোক্ষণ পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে মানুষজন জড়ো না হয় ততোক্ষণ কোনো ছবি অনএযারে যাবে না৷ সুতরাং পাঠানোর দরকার নাই।

হঠাৎ করে কানে ভেসে আসতে শুরু করে মিছিল-স্লোগান। দৌড়ে এগিয়ে যেতেই দেখি, বিএসএমএমইউর পেছনের সড়কে অর্থাৎ বিসিএস প্রশাসন একাডেমির সড়কে কয়েকশ আন্দোলনকারী বুক পেতে দিয়ে স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত করে তুলছে পুরো এলাকা। সেনাবাহিনীর শক্ত অবস্থানের কারনে মূল সড়কে বের হচ্ছেন না কেউ। ছবি নিলাম। বেশকিছু ছবি-স্লোগান। অফিসে যোগাযোগ করতেই যথারীতি উত্তর 'না'।

ফিরে এলাম শাহবাগ মোড়ে। ততোক্ষণে কানাঘুষা চলছে সেনাপ্রধানের জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ নিয়ে। অনেকেই (গণমাধ্যমকর্মী) অনেক ধরণের মতামত দিচ্ছেন। হঠাৎ খবর পেলাম উত্তরায় মানুষের ঢল। কেউ কেউ বলছেন কিচ্ছু হবে না। সেনাবাহিনী সব শান্ত করে দিবে৷ সময় গড়ায় শাহবাগের পরিস্থিতি বদলায় না। খবর আসতে থাকে উত্তরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। গলিপথ ছেড়ে মানুষ প্রধান সড়কে। সেনাবাহিনী নমনীয় অবস্থানে।

ঘড়িতে তখন ঠিক দুপুর ১টা। হাতে ফুল, ফুলের মালা, তোড়া, মুখে স্লোগান- 'এই মুহূর্তে দরকার সেনাবাহিনীর সরকার।' ঢাকা ক্লাবের দিক থেকে দৌড়ে শাহবাগ মোড়ে এগিয়ে আসতে থাকেন একদল মানুষ৷ অনেকে পায়ে লুটিয়ে পড়েন সেনাসদস্যদের। 'স্যার দ্যাশের স্বার্থে শাহবাগটা ছেড়ে দেন প্লিজ।' কিছুক্ষণ দমিয়ে রাখা গেলেও পরে আর সম্ভব হয়নি। শাহবাড় মোড়ে কখন কয়েশ মানুষ। তাদের উচ্ছ্বাস শুনে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির সড়কে আটকে থাকারাও ছুটে আসেন শাহবাগ মোড়ে৷ শাহবাগ দখলের সব ছবি তখন হাতে। দুপুর দুইটার প্রাইম নিউজের বাকি তখনও প্রায় ৪০ মিনিট। খবর দিলাম ফুটেজ রেডি, অফিসে পাঠাতে চাই৷ উত্তর, দরকার নাই, উপর মহলের নিষেধাজ্ঞা আছে।

ওই নিষেধাজ্ঞা আর কাটলো না। ফুটেজগুলোও আর অফিসে পাঠানো হলো না। দেখলো না আলোর মুখ। রয়ে গেলো ফোনেই। একটা বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছি। আজ হয়তো প্রাকাশ করছি। কিন্তু কি লাভ? এই ফুটেজগুলোর মতো আজ আমিও বড্ড মূল্যহীন💔