নার্ভাসনেস দূর করো : Remove your Nervousness : কামরান চৌধুরী
নার্ভাসনেস কিভাবে কাটাবেন ?
চলমান যান্ত্রিক জীবনে প্রতিনিয়ত আমরা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। পরীক্ষা, প্রেজেন্টেশন, ইন্টারভিউ, কারো সাথে কথা বলা, বিচার করা, স্টেজে কথা বলা ইত্যাদি উৎকণ্ঠা কাজ করে, যাকে নার্ভাসনেস বলে। এসময় হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়, শরীরে ঘাম বেশি হয়, হাতের তালু বা পায়ের তালু ঘেমে যায়, দাঁত দিয়ে নখ কাটা, পা দোলানো, চুলে ক্রমাগত হাত দেয় মানুষ। শরীরে অ্যাড্রিনালিনের ক্ষরণ বেশি হলে হৃদস্পন্দন বাড়ে। অনেকেই অল্পতেই নার্ভাস হয়ে পড়েন। এটি প্রতিদিনের অভ্যাস হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। কারণ বাড়াবাড়ি আকার নিলে তা হার্টের অসুখে পরিণত হতে পারে।
জীবনে কিছুটা দুশ্চিন্তা থাকতে পারে কিন্তু অতিরিক্ত নার্ভাসনেস বা দুশ্চিন্তা দেহ-মনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলে, স্বাভাবিক চিন্তাভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে- ব্যক্তির কর্মদক্ষতাকে নষ্ট করে দেয়। ফলে একটা ভয় কাজ করে যদি আমি কাজটি করতে না পারি? যদি আমার প্রেজেন্টেশন সবার পছন্দ না হয়? পরীক্ষাটা যদি ভালো না হয়? প্রশ্নের উত্তর যদি দিতে না পারি। এমন হাজারো দুশ্চিন্তা আমাদের মনের ভেতর ঘুরপাক খায়।
আমাদের অচেতন মন (unconscious mind)কোন কিছু ঘটার পূর্বেই তার ভেতরকার সম্ভাবনাময় বিপদকে খানিকটা অনুভব করতে পারে। ফলে আমরা ঐ বিপদের আশঙ্কাকে বুঝতে পারি। বিপদের আশঙ্কার উপর ভিত্তি করে অনুমান করি। যা বাস্তব নয়, যা এখনও ঘটেনি, তা-ই আমাদের মন সত্য বলে ধরে নেয় আগে থেকেই। এই উদ্দীপনা প্রায় প্রতিটি মানুষেরই হয়ে থাকে। আর যদি আমরা এটাকে সত্য বলে ধরে নিই তবে মনের অজান্তেই নার্ভাস হয়ে পড়ি এবং সেই কাজটি ভালো হয় না। সেটা পরীক্ষা, ইন্টারভিউ, প্রেজেন্টেশন যেটাই হোক না কেন।
নার্ভাস মানুষের মন অস্থির প্রকৃতির হয়ে থাকে। কখন কি বলে তারা নিজেরাও জানে না। তাদের আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকে। তারা ঝুঁকি নিতে ভয় পায়। ভীতু প্রকৃতির হয় এবং তাদের মন মূলত অনুদার, পক্ষপাতপূর্ণ ও অস্পষ্ট।
নার্ভস বোধ করলে নিজেই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিজের মনে সাহস আনতে হবে। আত্মবিশ্বাসী হতে হবে যা আপনাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখবে, নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে কিছু স্বাস্থ্যকর উপায় এই ভিডিওতে জানিয়ে দিব- যার ব্যবহার আপনাকে নার্ভাসনেস থেকে অনেকটা মুক্তি দিবে।
মেডিটেশন- চোখ বন্ধ করে নিজের শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে কয়েক মিনিট মনোনিবেশ করুন, জোরে জোরে শ্বাস নিন, ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন। ক্রমাগত কয়েকবার করুন। এতে রক্তচলনের ভেতরে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে আমাদের মস্তিষ্ক থেকে এন্ডোরফিন নির্গত হয়। এই এন্ডোরফিন শারীরিক ব্যথা, দুশ্চিন্তা ও নার্ভাসনেস সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে মন শান্ত হয়ে যাবে। দিনে অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধ্যান বা মেডিটেশন করতে হবে। প্রতিদিন সকালে ইয়োগা করলে ভেতরকার মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যাবে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর ও মস্তিস্কে রক্ত সঞ্চালন খুব ভালো হবে ফলে শরীর ভালো থাকবে।
দুঃশ্চিন্তা মূলত ভবিষ্যৎ ভিত্তিক মনের অবস্থা। তাই ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়ে চিন্তা না করে, বর্তমানকে প্রাধান্য দিন। বর্তমান সময়ে যে কাজটি করা প্রয়োজন দ্বিধায় না পড়ে তা করে ফেলুন। যা আগে থেকে বলা ও অনুমান করা যায় না তা নিয়ে, অহেতুক দুশ্চিন্তায় থাকার কোন মানে নেই।
ইতিবাচক ও বাস্তবধর্মী চিন্তা করতে হবে। ধরুন, একটি বড় প্রেজেন্টেশন তৈরী করবেন। আমি পারব না, আমার দ্বারা সম্ভব না, কখনো করিনি এমন না ভেবে নিজেকে কাজটির জন্য তৈরী করুন। নিজেকে অভয় দিন। মনে মনে ভাবুন, আমি কিছুটা চিন্তাগ্রস্ত কিন্তু আমি তৈরী এবং আমি অবশ্যই পারব। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আমি প্রস্তুত। ব্যস শুরু করে দিন দেখবেন তা সমাপ্ত করতে পেরেছেন।
জীবন মানেই সমস্যা, সব সমস্যারই কোনো না কোনো সমাধান রয়েছে এবং সময়ের সাথে সবকিছুই ঠিক হয়ে যায়। তাই বাস্তববাদী হোন। আবেগ এড়িয়ে চলুন।
শরীর ও মন সুস্থ রাখতে ভালো খাবার এবং ঘুম প্রয়োজন। এতে শরীর স্থিতিশীল থাকে। সুষম খাবার ও পুষ্টিকর সতেজ খাবারের প্রতি মনোযোগি হোন।
কখনও নার্ভাস বোধ করলে তখন ঠোটের ওপর আলতো করে আঙুল বোলাতে থাকুন। আমাদের ঠোটে অনেক প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্তু থাকে। ঠোটের ওপর আলতো করে আঙুল বোলালে এসব স্নায়ুতন্তু ক্রিয়াশীল হয়ে উঠে ও স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত করতে সাহায্য করে।
প্রাণ খুলে হাসুন। হাসলে শরীর থেকে হরমোন বেশী মাত্রায় ক্ষরণ হয়। ফলে অবসাদ, উৎকণ্ঠা খুব সহজেই কেটে যাবে এবং নার্ভাস হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম হয়।
পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নিজেকে তৈরি করুন। আগে থেকে অনুশীলন ও স্টাডি করুন। আত্মবিশ্বাসী হয়ে মনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করুন। অন্যরা কে কি করলো সেটা দেখবেন না। ভাববেন আপনিই সেরা। অন্য কারো মতো নন। সিচুয়েশন নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসুন, চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনিই সেটা পেরেছেন।
পরিশেষে অনেকে চাপ এবং নার্ভ সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যার ফলে সাফল্যের দরজাও খুলছে না। মহান স্রষ্টাকে স্মরণ করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে উত্তরণের চেষ্টা করে যেতে হবে। অনুশীলন অনুশীলন অনুশীলন করতে হবে।
Информация по комментариям в разработке