Jibon Theke Neya full Movie (1970) Zahir Raihan, Shuchanda, Razzak

Описание к видео Jibon Theke Neya full Movie (1970) Zahir Raihan, Shuchanda, Razzak

সিনেমার গল্প গড়ে উঠেছে বাংলার অতি সাধারণ এক পরিবারকে কেন্দ্র করে। দুই ভাই আনিস (শওকত আকবর) ও ফারুক (রাজ্জাক), বড়বোন রওশন জামিল এবং বোনের স্বামী খান আতাউর রহমান। বড়বোন রওশন জামিল বিবাহিত। কিন্তু বিবাহিত হলে কী হবে? তিনি থাকেন বাবার বাসাতেই। তার স্বামীও অত্যন্ত নিরীহ প্রকৃতির। সংসারের সব ক্ষমতা রওশন জামিলেরই হস্তগত। এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেই তিনি তার স্বামীসহ নিজের দুই ভাইয়ের ওপর একরকম নির্যাতনই চালিয়ে থাকেন।

একটি পরিবারের এক সার্বভৌম মহিলাকে চিহ্নিত করেছেন তত্কালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের রাজনৈতিক একনায়কতন্ত্রের রূপক অর্থে। ঘরের বাইরে রাজনৈতিক অস্থিরতা, আর ঘরের ভিতরে পরিবারের সদস্যদের ওপর গৃহকর্ত্রীর অত্যাচার। ছবিতে ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের কিছু তথ্যচিত্র দেখানো হয়েছে। কয়েকজন নারী আর একটি চাবির গোছাকে নিয়ে গল্পকে মনে হতে পারে একটি সাধারণ পরিবারের গল্প। কিন্তু সেই গল্পও হয়ে উঠতে পারে একটি রাষ্ট্রের গল্প। তেমনই একটি চলচ্চিত্র ১৯৭০ সালে নির্মিত জহির রায়হান পরিচালিত ‘জীবন থেকে নেয়া’। একটি পরাধীন দেশ কিভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়— এটি সেই গল্প। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ছবিটি নির্মিত হয়েছে পরাধীন সময়ে।

সবার বুকে তখন মুক্তির আগুন। মুখে বারুদমাখা স্লোগান। পরাধীনতার নিষ্পেষণের একসময়ে জহির রায়হান সেলুলয়েডে অমর করে রাখলেন বাঙালির মুক্তির অধিকার আদায়ের আখ্যান। তখনকার চলচ্চিত্রের গুণীজনদের মধ্যে কে ছিলেন না ছবিটিতে!

সিনেমাটিতে মূলত সাধারণ এক পারিবারিক গল্পের আড়ালে এক রাষ্ট্রের গল্পই বলা হয়েছে। বলা হয় পূর্ব বাংলার মানুষের অধিকার এবং সংগ্রামের কথা। তাই এ সিমেটিকে সবাই আমাদের মুক্তির আন্দোলনেরই একটা বড় অংশ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। এ সিনেমাতেই অমর একুশের ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি যেমন ছিল, ঠিক তেমনি নজরুলের কারার এ লৌহ কপাট গানটিও ব্যবহৃত হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার হাস্যকরভাবে রেডিও টিভিতে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষিদ্ধ করে দেয়। এর মাত্র কয়েক বছর পরই জহির রায়হান তার সিনেমাটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিকে প্রথমবারের মতো কোনো সিনেমায় ব্যবহার করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর এ গানটিই বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পায়।

১৯৫২ থেকে ১৯৭০— এ সময়ের প্রেক্ষাপটে সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। একগুঁয়ে স্বৈরচারি শাসকের অত্যাচারের প্রতিবাদে সকলকে এক হবার আহবানে জাতীয়তাবাদ ও দেশাত্মবোধকে একই সাথে তুলে ধরেছেন। এটিই ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও একুশ নিয়ে নির্মাণ হওয়া প্রথম সিনেমা। ছবির একটি অনবদ্য দৃশ্য হলো একুশে ফেব্রুয়ারির প্রভাতফেরীতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার দৃশ্য। বাস্তব সেই দৃশ্য ১৯৭০ সালের ২১ ফেব্র‚য়ারি থেকে নেওয়া।

শেষ অংশে যে মেয়ে শিশুটির জন্ম হয় তার নাম রাখা হয় ‘মুক্তি’। অত্যাচার নিপীড়নের দিন শেষে মুক্তি মিলবে এমন আশায় সকলকে এক হয়ে কণ্ঠস্বর জাগিয়ে তোলার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

জহির রায়হান শুধু একটি নাম নয়, বরং বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। শুধুমাত্র সিনেমা জগতে নয়, সাহিত্য থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের গর্বিত শহীদদের সাথে উচ্চারিত হয় তার নাম। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত সবই তিনি দেখেছেন খুব কাছ থেকে। দেখেছেন অত্যাচার, স্বৈরশাসন, প্রতিবাদ। সেই থেকেই অনুপ্রেরণা আর দেশের জন্য কিছু একটা করার সংকল্প থেকেই তৈরি করেন ‘জীবন থেকে নেয়া’ সিনেমাটি। যেখানে তিনি প্রত্যক্ষভাবে দেশের আপামর জনগণকে এক হয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ডাক দেন।

ছবির সংক্ষিপ্ত পরিচিতি-

ছবির নাম :জীবন থেকে নেয়া
Taken From Life
পরিচালক :জহির রায়হান
মুক্তি :১৯৭০ সালের ১০ এপ্রিল (পাকিস্তান)
সময় :১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট (প্রায়)
সংগীত পরিচালক :খান আতাউর রহমান
দেশ :বাংলাদেশ
ভাষা :বাংলা
অভিনয় :রাজ্জাক, সুচন্দা, আনোয়ার হোসেন, শওকত আকবর, রোজি সামাদ, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিল, বেবি জামান, আমজাদ হোসেন।

লেখা শাহিনুর আলম

Комментарии

Информация по комментариям в разработке