Скачать или смотреть কাশ্মীর ট্যুর, অর‍্যু ভ্যালী পেহেলগাঁও যাওয়ার পথে pahalgam to chandanwari

কাশ্মীর ট্যুর, অর‍্যু ভ্যালী পেহেলগাঁও যাওয়ার পথে pahalgam to chandanwari


পেহেলগাম কাশ্মীর ভ্রমণ

কাশ্মীরকে ভারতের ভূস্বর্গ বলা হয়, আর এই ভূস্বর্গের অন্যতম উজ্জ্বল রত্ন হলো পেহেলগাম। পেহেলগাম এমন একটি স্থান যেখানে প্রকৃতি তার সমস্ত সৌন্দর্যকে উজাড় করে দিয়েছে। পাহাড়, নদী, বন এবং সবুজ উপত্যকার মেলবন্ধন এখানে এক অনন্য মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। পেহেলগাম কাশ্মীর উপত্যকার একটি অন্যতম বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র, যা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৭২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এবং লিদার নদীর তীরে অবস্থিত একটি ছোট্ট সুন্দর গ্রাম।

পেহেলগামের নামকরণের পেছনে একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে। ‘পেহেল’ শব্দের অর্থ প্রথম এবং ‘গাম’ শব্দের অর্থ গ্রাম। বলা হয় যে, এটি প্রাচীন কালে কাশ্মীর অঞ্চলের প্রথম গ্রাম ছিল, যা ব্যবসায়িক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। পেহেলগাম আগে গ্রীষ্মকালে পশু পালকদের থাকার জায়গা ছিল। তারা তাদের ভেড়া ও ছাগল চরানোর জন্য এখানে আসতেন। পরে এটি ধীরে ধীরে পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়।

পেহেলগামের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য

পেহেলগামের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য এর মনোরম সৌন্দর্যকে আরো উজ্জ্বল করে তোলে। এটি চারপাশে বরফে মোড়া পাহাড় দ্বারা ঘেরা এবং লিদার নদীর পানির মৃদু ধারা জায়গাটিকে আরো শান্তিময় করে তোলে। শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা নেমে যায় হিমাঙ্কের নিচে, আর গ্রীষ্মকালে থাকে আরামদায়ক। এখানকার গ্রীষ্মকালে সবুজ ঘাসে মোড়া পাহাড়, পাইন ও দেবদারু গাছের বন এবং নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে লাখ লাখ পর্যটক আসেন।

পেহেলগামের প্রধান আকর্ষণ

পেহেলগাম তার বিভিন্ন আকর্ষণের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে পর্যটকরা ভ্রমণের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসও উপভোগ করতে পারেন।

১. বেতাব ভ্যালি
পেহেলগামের সবচেয়ে জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে একটি হল বেতাব ভ্যালি। এটি পেহেলগাম থেকে প্রায় ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত। এই উপত্যকাটি ঘন সবুজ বন, পরিষ্কার নীল আকাশ এবং উঁচু পাহাড়ের সৌন্দর্যে ভরপুর। বেতাব ভ্যালির নামকরণ করা হয়েছে হিন্দি চলচ্চিত্র ‘বেতাব’-এর নামে, যা এই উপত্যকায় চিত্রায়িত হয়েছিল। এখানে লিদার নদীর স্বচ্ছ পানি এবং বরফে ঢাকা পাহাড়ের পটভূমি মুগ্ধ করে যে কোনো পর্যটককে।

২. অরু ভ্যালি
পেহেলগাম থেকে ১২ কিমি দূরে অবস্থিত অরু ভ্যালি, ট্রেকিং এবং ক্যাম্পিংয়ের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এখানে গ্রীষ্মকালে পর্যটকরা হাইকিং, ফিশিং এবং হর্স রাইডিং করতে পারেন। অরু ভ্যালির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নিস্তব্ধ পরিবেশ। এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। অরু ভ্যালিতে গেলে যেন মনে হয় আপনি প্রকৃতির কোলে আশ্রয় নিয়েছেন।

৩. চন্দনওয়ারি
পেহেলগাম থেকে ১৬ কিমি দূরে অবস্থিত চন্দনওয়ারি, অমরনাথ যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ বেস ক্যাম্প। এখান থেকে প্রতি বছর হিন্দুদের পবিত্র অমরনাথ গুহার যাত্রা শুরু হয়। চন্দনওয়ারি শীতকালে বরফে ঢাকা থাকে এবং এখানে পর্যটকরা স্নোফাইট এবং স্নো স্কিইংয়ের মতো মজার খেলায় অংশ নিতে পারেন। চন্দনওয়ারি থেকে বরফে ঢাকা পথ ধরে উপরের দিকে উঠলে মুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য চোখে পড়ে।

৪. তুলিয়ান লেক
পেহেলগাম থেকে প্রায় ১৬ কিমি দূরে অবস্থিত এই হ্রদটি প্রায় ১১,০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এটি বরফে ঢাকা পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত এবং এর পানি স্বচ্ছ ও হিমশীতল। তুলিয়ান লেকের যাত্রাপথ অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, তবে সেই পথ পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রকৃতির এক অপরূপ রূপ ধরা দেয়। এটি ট্রেকিংপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ স্থান।

৫. বাইসরান
পেহেলগাম থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরে বাইসরান নামে পরিচিত একটি ছোট্ট উপত্যকা রয়েছে, যা মিনিসুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত। এর কারন হলো এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সুইজারল্যান্ডের সাথে তুলনীয়। এই উপত্যকাটি পাইন গাছের ঘন বন এবং পাহাড়ি ঢাল দিয়ে ঘেরা, যা পর্যটকদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ এবং সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করে।

পেহেলগামে অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস

পেহেলগাম শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্যও একটি আদর্শ স্থান। এখানে পর্যটকরা বিভিন্ন ধরনের রোমাঞ্চকর খেলা উপভোগ করতে পারেন, যেমন ট্রেকিং, স্কিইং, এবং রিভার রাফটিং।

১. ট্রেকিং
পেহেলগামের চারপাশের পাহাড়গুলো ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ। বিভিন্ন ট্রেকিং রুট এখানে রয়েছে যা সহজ থেকে কঠিন পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের জন্য উপযুক্ত। অরু ভ্যালি থেকে শুরু করে কোলাহাই গ্লেসিয়ার পর্যন্ত ট্রেকিং রুটগুলির সৌন্দর্য অসাধারণ।

২. রিভার রাফটিং
লিদার নদীর তীব্র স্রোত রিভার রাফটিংয়ের জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। এটি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ। গ্রীষ্মকালে, নদীর স্রোত অত্যন্ত শক্তিশালী হয় এবং এটি রাফটিংয়ের জন্য আদর্শ।

৩. হর্স রাইডিং
পেহেলগামের চারপাশের পাহাড়ি পথে হর্স রাইডিং পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় আকর্ষণ। যারা ট্রেকিং করতে আগ্রহী নন, তারা ঘোড়ার পিঠে চড়ে এই মনোরম স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। বিশেষত অরু ভ্যালি ও বাইসরানে হর্স রাইডিং পর্যটকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়।

পেহেলগামে থাকার ব্যবস্থা

পেহেলগাম একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় এখানে বিভিন্ন ধরণের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। পাঁচতারা হোটেল থেকে শুরু করে সাধারণ গেস্ট হাউস পর্যন্ত বিভিন্ন রকম অপশন পাওয়া যায়। এখানকার হোটেলগুলো সাধারণত লিদার নদীর আশেপাশে অবস্থিত, যাতে পর্যটকরা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। এছাড়া যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে চান, তারা চাইলে ক্যাম্পিংও করতে পারেন।

পেহেলগাম ভ্রমণের সেরা সময়

পেহেলগাম ভ্রমণের সেরা সময় হলো মে থেকে অক্টোবর মাসের মধ্যে। এই সময়ে আবহাওয়া থাকে মনোরম এবং সবুজে ঢাকা পাহাড় ও উপত্যকার সৌন্দর্য উপভোগ করার উপযুক্ত সময়। শীতকালে এখানে প্রচুর তুষারপাত হয়, যা আবার স্কি প্রেমীদের জন্য আদর্শ। তুষারে মোড়া পেহেলগাম এক ভিন্নরকম পরিবেশ উপহার দেয়, যা পর্যটকদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয়।