Скачать или смотреть #আমি_কিংবদন্তির_কথা_বলছি

★ যে কবিতা শুনতে জানে না-
সে দিগন্তের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে!
ও জাতীয় চেতনা :----
(অজস্র)
----------------------
আজ এই অদ্ভুত কুয়াচ্ছন্ন ক্ষণে জাতিগত ঐতিহ্য জাগে মনে! ইতিহাসের পথ ধরে ছায়ার মতন এসে আমার উঠোনে মায়ের উননের আলোকিত জানালার পাশে বলে ওঠে কথা ।
সেইসব হাজার বছরের বচন হৃদয়ে শোনায় আজ যেন কিংবদন্তির মতন কবিতা ।
বাঙালী আমি , জানি আমার জাতির ইতিহাস: শোষিতের বঞ্চিতেরই ইতিহাস। নিপিড়ীতের মানবেতর জীবনের ইতিহাস। তবু যে সে এক বিপ্লবের বিদ্রোহের ইতিহাস! জানি আমি । নতমুখ বারংবার উর্ধ্বে তুলে ধরিবার তরে আমরন প্রচেষ্টা আর ক্লান্তির ইতিহাস!
ঐ যে শান্ত স্নিগ্ধ বাংলার পাড়াগার মাথার উপর নীল আকাশ? ঐ যে সৌর্য্যবান সূর্য, সূর্যের বর্শার মত আলোকে গাঁথা নিলিমা, নিলিমায় স্নিগ্ধতার আভাস ? -এ ইতিহাস তারই অভিমূখে তুলে ধরিবার ।
ঐ দিগন্ত পারের পারাবার জানে-
গর্বিত আমার জাতি দর্পিত সাহস সাঁধ বুকে লয়ে তার দিবারাতি স্বপ্ন দেখেছে বহুবার- পুনর্বার । আজো দেখছে। এই মাঠ নদীঘাট প্রান্তরও জানে তাহা - দেখিয়াছে কতবার! দুঃস্বপ্নের অন্ধকারেও শুভ স্বপ্নেরা সৌন্দর্যের মুখশ্রীর মত প্রত্যাশা লয়ে আশাজাগানিয়া গীত গান গেয়ে গেছে। আজো গেয়ে যায়।
মনে পরে হায়! কত রক্ত- নীল বিদ্রহের কথা, ব্রিটিশ হঠানো কত সন্যাস ফকীর গেরিলা আন্দোলনের কথা, ছলেবলে যারা বাঙালির হৃদয়ে দূষণ ছড়ায়ে গেছে, দিয়ে গেছে অন্ধকার আর বৈরীতা। ভায়ে ভায়ে বাড়ায়ে গেছে দ্বন্দ্ব। সিন্ধুর তীরে হিন্দু মুসলীম আরো কত বিশ্বাস শত শত বছরের ভাতৃত্ববোধকে ভেঙ্গে দিতে চেয়েছে। কতবার ফুরায়েছে সোনা ধান নবান্নের আনন্দ। তাদের শোষণ বেড়ির আঘাতে ছিন্নভিন্ন করে গেছে অগণন ভালোবাসার সংসার। ঘর বাটি পাড়ামহল্লা, কারখানার কল, জমি ক্ষেতি - দেশ মফস্বল! বহুবার অন্ধকার সন্ধ্যার অপচেষ্টার মত আসিয়া গেছে। এ জাতির এ দেশের নাম মুছে দিতে চেয়েছে। তবু কি পারিয়াছে তাহারা নাম মুছিবার -আমার এই বাঙ্গালী জাতিটির? না, পারে নাই তাহারা। পারে নাই তাদের দুশ্চরিত্রের মত ভূমিকা লয়ে ডাচ,স্পেনিশ,ওলন্দাজ বর্গীদল যত হায়নার মত হানাদার : ভূত প্রেত জঙ্গল যত সব । ইতিহাসে এসেগেছে আরো যাহারা তাদের মত শোষক?
ফিরে গেছে সব শুধু রয়ে গেছে কলোরব -পদ্মা মেঘনার তীরে। আর পূর্বসূরির পিঠে ইতিহাস হয়ে ছেঁপে গেছে যেন রক্তজবার গুচ্ছ গুচ্ছ ক্ষত!

অবিরত পরিশ্রম- ফসল- ক্লান্তি তবু শান্তিতে থাকতে দেয়নি যেই পরাধীনতা? আমার পূর্বপুরুষের সম্মুখে আনিয়াছে পাহাড়ের মত বাঁধা - তীব্র বিঘ্নতা। স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছে স্বাধীনতা।
তবু পেরেছে কি তা - কে আছে বাঙালিরে আটকাবার? আবেগে হৃদয়ে দুর্মর জাতি আমার। বিষ্ময়কর অন্ধকারে বন্ধচোখে পারি দেয় দুস্তর পারাবার? তাই
অতিক্রান্ত সেই সব পদতলে গিয়াছে। হয়ে গেছে আজ অতীত; ইতিহাসের অতিক্রান্ত ধ্বসে যাওয়া সমস্ত পাহাড়!

বহু যুগ আমার পূর্বসূরিরা ক্রীতদাসের মত পরাধীন ছিলেন - ভিনদেশী বর্গী সামন্তদের কাছে। বহু অত্যাচার নিপীড়ন তাদের উপর যে হয়েছে তাহা সময় দেখিয়াছে। মরেও তারা মরিতে পারে নাই
যেন। আরো নির্যাতন সহিতে হবে সেই দুঃশাসনের পদতলে? হয়তো তাই!
তবু স্বপ্ন আর তাদের শাশ্বত কাজ বিপ্লবের মত রুখে দিয়েছে সব অশুভদের ! সেইদিন গেছে চলে।
তাহারা কৃষি কাজ করে গেছে, তাই দিগন্ত তাহাদের তুষ্ট করেছে ; শস্যের সম্ভার তাদের করেছে সমৃদ্ধ । গাভীর পরিচর্যা করে পেয়েছে আশীর্বাদ। মৎস্যজীবিকা করে জেলেরাও পেয়েছে সাধু পানির আমিষের স্বাদ। বাংলার পাড়াগায় বাঙালীর
জীবনের সেই স্বাদ -আস্বাদ আঘ্রাণ কবিতার ভেতর থেকে উঠে এসে আজো আমাদের জীবন্ত করে তোলে । প্রাণবান হয় আমাদের অন্তর পূর্বসূরির প্রানশক্তি লয়ে। তাহাদের কথা ভাষা ইতিহাস আর সাহিত্যের ভেতরে আমাদের টেনে লয়। - দ্রহের আগুনে - প্রেমের শিখায় দহে। কালের যুদ্ধ -বারুদ -শান্তি -পালক গভীর রুপকথার দেশে যেন ডেকে লয়! অতপর সবুজ শ্যামল মাঠে ধীরে শুয়ে থাকিবার সুখ দেয় ! দেখায় স্বাধীনতার উজ্জল মুখ। যেখানে আমাদের পূর্বসূরিরা রয়েছে গভীর ঘুমে ঘুমায়ে!
পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতির নিজস্বতা যেমন আছে আচারে- সংস্কৃতিতে? তেমনি আছে তার নিজস্ব ভাষাতে । মাতৃভাষায়। মাতৃভাষা প্রাণের অংশ। জাতির অপার ভালোবাসা সেখানে। বাঙ্গালির ভালোবাসার মাতৃভাষা বাংলা। ভিনদেশীদের অনেক ভাষা শিখে ব্যবহার করতে গেলে বোঝা যায় যেন মনের কথা কিছুতেই যেন ঝেরে বলা হচ্ছে না তাতে। মন হালকা কিছুতেই হয় না যেন! যতক্ষণ না মাতৃভাষায় সে কথা বলে ফেলা হয়। এ এক আজব ব্যাপার এইখানে রয়ে যায় ।
আবার একজন কবির প্রাণের অংশ হলো কবিতা। প্রাণের জানালা কবিতা। তাই কোন কবি মাতৃভাষা ব্যতীত অন্য কোন শেখা তার ২য় ভাষায় কবিতা বা উপলব্ধী পূর্ণভাবে রাখতে পারে বলে আমার মনে হয় না। রাখলেও প্রাণহীন শব্দের কঙ্কাল বৈ তেমন একটা কিছু হয়ে উঠেছে বলে মনে হয় না যেন । কবিতা তো সম্পাদকীয় রিপোর্ট নয়! সে জন্যেই বোধ করি মাইকেল,জীবনান্দের মত বাংলার বিশাল কবিকূল ইংরেজিতে রচনা করতে গিয়ে অ -খ্যাত হয়েই ফিরেছিলেন ঘরে? শুন্য হাতে! বরং নিদারুন আর করুন আঘাতে।
তারপর হৃদয় যখন ফিরেছে বাংলায় তখনই মহাকাব্য কিম্বা রূপসী বাংলা হয়ে মিশেছিল হৃদয়ে হৃদয়। তবেই তো তাহারা হয়েছেন বাংলার বিশাল কবি। দিগন্ত অধিকারে নিয়ে এঁকেছেন তাহারা নদীমাতৃক এ মাধূরীর ছবি।

যতদুর অপাপবিদ্ধ হৃদয়ের চোখ যায় তাই দিগন্ত আর তা কেবল কবিতার অধিকারে। তাই কবিতার থেকে দূরে সরে গেলে দিগন্তের অধিকার হারাতে হয় বৈকি!

"আমি কিংবদন্তির কথা বলছি" আবেগ ও ঐতিহ্যময় কবিতাটি কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ স্যারের রচিত। তিনি বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ সচিব ছিলেন, রাষ্ট্রদূত ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন । সেসব বিশেষণ সব ম্লান করে তিনি বাঙালীর চেতনায় এমন একজন অন্যতম কবি। কবি হয়ে আছেন এবং থেকে যাবেন চিরকাল বাংলা ভাষা নিয়ে রচিত শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে । তিনি লিখেছিলেন
‘মাগো, ওরা বলে,
সবার কথা কেড়ে নেবে
তোমার কোলে শুয়ে
গল্প শুনতে দেবে না।
বলো, মা, তাই কি হয়?
ধন্যবাদ -
অজস্র মামুন (কবি)
বৃহস্পতিবার /০৬ চৈত্র - ১৪৩১ /
/ রমনা- ★ / ঢাকা / বাংলাদেশ ।