Скачать или смотреть দাবানলে পুড়ছে ক্যালিফোর্নিয়া। আগুন নেভাতে যত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকান্ড

দাবানলে পুড়ছে ক্যালিফোর্নিয়া। আগুন নেভাতে যত অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকান্ড
ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ দাবানলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য। দমকা বাতাসের কারণে সাত দিনেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বন বিভাগ থেকে ফায়ার ডিপার্টমেন্ট, বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র থেকে শুরু করে সামরিকপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সবাই যেন এক মহাযুদ্ধে নেমেছে আগুনের বিরুদ্ধে। আকাশ থেকে উড়োজাহাজ পানির ঝর্ণা ঢালছে, গোলাপি পাউডার ছেটানো হচ্ছে। আবার কোথাও ড্রোন ঘটনাস্থলের গভীরে ঢুকে আগুনের গতিবিধি নির্ণয় করছে। সবকিছু একত্রে পর্যবেক্ষণ করছে স্যাটেলাইট আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।
দাবানল নিয়ন্ত্রণে উভচর বিমানের ব্যবহার এক ঐতিহাসিক পরীক্ষিত কৌশল। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী ধরা হয় কানাডায় তৈরি সুপারস্কুপার বিমানগুলোকে। প্রতিবার এটি প্রায় 6000 লিটার পানি নিয়ে একেবারে ঝর্ণার মতো আগুনের উপর ঢেলে দেয়খ। বিশেষ করে বড় কোন জলাশয় বা সমুদ্র উপকূল থেকে মাত্র 12 সেকেন্ডে পানি ভরে ফিরে আসতে পারে এই বিমান। এবারের ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলে বোম্বার্ডিয়ার 415 মডেলের চারটি সুপারস্কুপার ছুটে বেড়াচ্ছে আগুন নেভাতে। পাহাড় ও দুর্গম এলাকার মধ্যেও এরা যথেষ্ট দক্ষতায় কাজ করছে। তাদের পাশাপাশি হেলিকপ্টার ও অন্যান্য আকাশযান থেকে পানি ফোম ও রাসায়নিক ছেটানো হচ্ছে।
দাবানলের ভিডিওতে প্রায়ই দেখা যায় আকাশ থেকে গোলাপি রঙের এক ধরনের পাউডার ছিটিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটি আসলে এক ধরনের ফায়ার রিটার্ডেন্স যার পরিচিত নাম ফসচেক। এই মিশ্রণে থাকে 80 শতাংশ পানি 14 শতাংশ অ্যামোনিয়া ফসফেট ও অ্যামোনিয়া সালফেট এবং 6 শতাংশ রঙিন এজেন্ট। ফসচেক দাবানলের আগুন থেকে তাপ শোষণ করে দহন প্রক্রিয়া বন্ধে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। গোলাপি রঙের কারণে খুব সহজেই বোঝা যায় কোথায় কোথায় এই রাসায়নিকটি ছেটানো হয়েছে। সাধারণত বনাঞ্চল ও শস্যু ক্ষেত্রে এগুলো স্প্রে করা হয় যাতে আগুনের শিখা অন্যত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
যেসব এলাকায় মানুষের বসতি বেশি, যেখানে ঘরবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে, সেখানে শুধু পানি বা ফসচেক নয়, বাড়তি নিরাপত্তার জন্য ক্লাস এ ফোম ও বেরিকেড ফায়ার জেল ব্যবহার করা হয়। এই ফোম ও জেল আগুনের নিকটে এসে দ্রুত স্ফিত হয়ে অক্সিজেনের পথ বন্ধ করে দেয়। আগুনকে কার্যকরভাবে ঢেকে রাখে। দীর্ঘ সময় ধরে রাখার কারণে আগুন নতুন করে জ্বলে ওঠার আশঙ্কাও অনেক হ্রাস পায়।
দাবানলের ধোঁয়া এতটাই ভারী হয়ে উঠতে পারে যে অনেক সময় সেখানে হেলিকপ্টার বা বিমান থেকে কাজ করা কঠিন হয়। এসময় ড্রোন হয়ে ওঠে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার। রিমোট চালিত এসব ক্ষুদে আকাশ যান দাবানলের গভীরে উড়ে গিয়ে থার্মাল ক্যামেরা ও ইনফ্রারেড সেন্সর দিয়ে তাপমাত্রার পরিমাণ, আগুনের উৎপত্তি ও গতিপথ নির্ণয় করে।
অদ্ভুত কিন্তু কার্যকর একটি কৌশল হলো নিয়ন্ত্রিত আগুন সৃষ্টি করা। এজন্য ড্রোন থেকে পিংপং বল আকৃতির দাহ্য বস্তু ফেলা হয় এগুলো আগুন ধরিয়ে দেয় নির্দিষ্ট অঞ্চলে যেন বড় দাবানলটির পথে ফাঁকা বা নিঃশেষিত অঞ্চল তৈরি হয়, যা আগুনের বিস্তার ঠেকায়। একে ফায়ার ফাইটাররা ব্যাক বার্নিং পদ্ধতিও বলে থাকেন।
দাবানল পর্যবেক্ষণে লক হিড মার্টিন তাদের স্মার্ট স্যাটেলাইট প্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত রিয়েল টাইম ইমেজ বিশ্লেষণ করে আগুনের বিস্তার কোথায় বাড়ছে, বাতাসের গতি কোন দিকে বইছে, এসব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খুব দ্রুতই পাওয়া যায়। এর সঙ্গে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যুক্ত থাকায় দাবানলের সম্ভাব্য গতিপ্রকৃতি বা ছড়িয়ে পড়ার সময় ও দিক পূর্বাভাস দেয়া সহজ হয়েছে। ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ আগাম সতর্কতা করে মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারছে।
কিছু রিপাবলিকান নেতা দাবানল নিয়ন্ত্রণে ক্লাউড সিডিং এর পরামর্শ দিয়েছেন। এ পদ্ধতিতে মেঘের মধ্যে রাসায়নিক পদার্থ যেমন শুষ্ক বরফ সিলভার আয়োডাইড পটাশিয়াম আয়োডাইড ইত্যাদি ছিটিয়ে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি নামানোর চেষ্টা করা হয়, যদিও প্রচন্ড শুষ্ক আর পরিষ্কার আকাশে এ পদ্ধতি সচরাচর কার্যকর নয়। নাসার মতে ক্যালিফোর্নিয়ার মত এলাকায় ক্লাউস করা হলেও তা দাবানল নিয়ন্ত্রণে তেমন ফলপ্রসু হবে না। তবে গবেষকরা বলছেন সামনের দিনে হয়তো আবিষ্কার হবে এমন সব প্রযুক্তি যা আগে থেকেই আগুনের সম্ভাব্য এলাকায় পানির আস্তরণ বানিয়ে রাখবে বা গাছের পাতায় বিশেষ রাসায়নিক স্প্রে করে তাদের আরো প্রতিরোধী করে তুলবে, অথবা আগে থেকেই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি মিলবে অতি দ্রুত মানুষও সরে যাবে নিরাপদ স্থানে। সেদিন হয়তো আগুনের সঙ্গে লড়াইটা হবে আরো ছোট আরো নিয়ন্ত্রিত ঘটবে আরো কম প্রাণহানি একই সাথে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও হ্রাস করা যাবে