জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সব শাখায় মুসলমানদের অবদান রয়েছে। জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাকে ইসলাম যেহেতু মর্যাদা দান করে উৎসাহিত করেছে; ফলে যুগে যুগে অনেক মুসলিম মনীষী জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। মানবিক জীবনের যাবতীয় সমাধান মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে রয়েছে। কুরআনকে পর্যবেক্ষণ করে মানবতার কল্যাণে মুসলিম বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন বিষয় আবিষ্কার করেছেন। চিকিৎসাশাস্ত্র, রসায়নশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা, গণিত, ভূগোল প্রভৃতিসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম মনীষীদের ব্যাপক অবদান লক্ষণীয়।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় মুসলমানদের যে অবিস্মরণীয় অবদান রয়েছে সেখান থেকে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করলাম-
চিকিৎসাশাস্ত্র : জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো চিকিৎসাবিজ্ঞান। শরীর সম্পর্কিত বিদ্যা হলো চিকিৎসাবিজ্ঞান। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসবিদ আল কিফতি তার ‘তারিখুল হুকামাত’-এ লিখেছেন, ‘হজরত ইদ্রিস আ: হলেন প্রথম চিকিৎসাবিজ্ঞানী। আর ইসলামের সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সা: ছিলেন শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী। চিকিৎসাশাস্ত্রে কুরআনের অবদান উল্লেখ করতে গিয়ে জার্মান পণ্ডিত ড. কার্ল অপিতজি তার গ্রন্থে দেখিয়েছেন, কুরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে ৯৭টি সূরার ৩৫৫টি আয়াত চিকিৎসাবিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট। তা ছাড়া হাদিসের শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ বুখারি শরিফে ‘তিব্বুন নববী’ শীর্ষক অধ্যায়ে ৮০টি পরিচ্ছেদ রয়েছে। সেখানে রোগের চিকিৎসা-পদ্ধতি, রোগ নিরাময় ও রোগ প্রতিরোধ কার্যাবলি সংবলিত। এ ছাড়াও চিকিৎসাশাস্ত্রে বিভিন্ন মুসলিম মনীষী বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তাদের মধ্যে ইবনে সিনা, আল-রাজী, আল-কিন্দি, আলী আত তাবারি, ইবনে রুশদ প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
ঔষধশাস্ত্র : মুসলমানরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে ঔষধশাস্ত্রে ব্যাপক অবদান রাখেন। তারা নিজেরা বিভিন্ন রোগের ওষুধ তৈরি করতেন। তাছাড়া ওষুধ তৈরি ও বিভিন্ন রোগের সমাধান প্রসঙ্গে বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন। যেমন- ইবনে সিনার ‘কানুন-ফিত-তিব্ব’, আল রাজীর ‘কিতাবুল মনসুরি’, আলবেরুনির ‘কিতাব আস সায়দালা’ আলী আল মাওসুলির চক্ষু চিকিৎসার সবচেয়ে দুর্লভ ও মূল্যবান গ্রন্থ ‘তাজকিরাতুল কাহহালিন’ প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন।
অস্ত্রোপচার : মুসলিম বিজ্ঞানী আল-রাজী সর্বপ্রথম অস্ত্রোপচার বিষয়ে আধুনিক ভাবনা উদ্ভাবন করেন।
চক্ষু চিকিৎসায় : চক্ষু চিকিৎসায় মুসলমানদের মৌলিক আবিষ্কার রয়েছে। আলী আল মাওসুলি চোখের ছানি অপারেশনে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। জর্জ সার্টনও তাকে জগতের সর্বপ্রথম মুসলিম চক্ষু চিকিৎসক বলে অকপটে স্বীকার করেছেন। তার ‘তাজকিরাতুল কাহহালিন’ চক্ষু চিকিৎসায় সবচেয়ে দুর্লভ ও মূল্যবান গ্রন্থ। এ ছাড়া চিকিৎসাশাস্ত্রে হাসান ইবনে হাইসাম, আলবেরুনি, আলী ইবনে রাব্বান, হুনাইন ইবনে ইসহাক, আবুল কাসেম জাহরাবি, জুহান্না বিন মাসওয়াই, সিনান বিন সাবিত, সাবিত ইবনে কুরা, জাবির ইবনে হাইয়ান প্রমুখও উল্লেখযোগ্য।
হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা : রাসূল সা: তাঁর জীবদ্দশায় বিশেষত যুদ্ধকালীন সময়ে যে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন সে ধারণাকে কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে মুসলিম শাসকরা সঠিক চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা ও ব্যবহারিক জ্ঞানচর্চার স্বার্থে বিভিন্ন স্থানে স্থায়ী চিকিৎসাকেন্দ্র তথা হাসপাতাল গড়ে তোলেন। খলিফা ওয়ালিদ ইবনে মালিকের শাসনামলে প্রথম স্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করা হয়। ধর্ম-বর্ণ ভেদে সবাই সেখানে চিকিৎসা পেত। রোগভেদে ছিল আলাদা ওয়ার্ড ব্যবস্থা। মুসলিম সালতানাতে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন হাসপাতালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সিরিয়ার দামেস্ক শহরের আল-নুরি হাসপাতাল, জেরুসালেমের আল সালহানি, বাগদাদের আল-সাইয়িদাহ, আল-মুক্তির আদুদি হাসপাতাল, কায়রোর আল মানসুরি হাসপাতাল, আফ্রিকার মরক্কোর আল-মারওয়ান ও তিউনিসের মারাবেশ হাসপাতাল উল্লেখযোগ্য।
রসায়নশাস্ত্র : বিজ্ঞানের সর্ববৃহৎ ও প্রধান শাখার নাম রসায়ন। রসায়নশাস্ত্রের জনক বলা হয় জাবির ইবনে হাইয়ানকে। রসায়নশাস্ত্রে বিভিন্ন মুসলিম মনীষী অবদান রাখেন। তাদের মধ্যে জাবির ইবনে হাইয়ান, খালিদ বিন-ইয়াজিদ, জাকারিয়া আল রাজী, আল-জিলদাকি প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
যৌগিক সূত্র আবিষ্কার : জাবির ইবনে হাইয়ান প্রথম এসিড, গন্ধক, দ্রাবক, জল দ্রাবক, রৌপ্যক্ষার ও অনান্য যৌগিক সূত্র আবিষ্কার করেন। তা ছাড়া তিনি ভস্মীকরণ ও লঘুকরণকে বৈজ্ঞানিক নিয়মে আলোচনা করেছেন।
ডিমের পানি প্রস্তুতকরণ : একাদশ শতাব্দীর বিখ্যাত রসায়নবিদ ইমাম জাফর আস-সাদিক সর্বপ্রথম রসায়নশাস্ত্রের আলোকে ডিমের পানি প্রস্তুতকরণ পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
ধাতুর পরিবর্তন : মুসলিম মনীষী আবুল কাশেম আল ইরাকি সর্বপ্রথম ধাতুর পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেন।
জ্যোতির্বিদ্যা : জ্যোতির্বিদ্যা হলো মহাকাশ-সম্পর্কিত বিজ্ঞান। গ্রহ, নক্ষত্র, চন্দ্র, সূর্য ও অলৌকিক বস্তুগুলোর গতিবিধি নিয়ে যে শাস্ত্র আলোচনা করে তাকে জ্যোতির্বিজ্ঞান বলে। পৃথিবীর গতিবিধি, অক্ষাংশের পরিবর্তন, ধূমকেতুর রূপ নির্ণয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদান ঈর্ষণীয়। জ্যোতির্বিদ্যার উৎকর্ষ সাধনে যে ক’জন অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে আল মনসুর, আন মামুন, আবু মাশার, আল খারেজমি, আবুল হাসান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
মানচিত্রের ধারণা : বিশ্ব মানচিত্রের প্রথম ধারণা দেন মুসলিম মনীষী আল-ইদ্রিসি। পরবর্তীতে এটিই বিশ্ব মানচিত্রের মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়।
বর্ষপঞ্জি ও নক্ষত্র : উমর খৈয়াম প্রথম বর্ষপঞ্জি প্রণয়ন করেন। পরবর্তীতে আল-বাত্তানি সর্বপ্রথম নক্ষত্রের চার্ট তৈরি করেন।
উদ্ভিদবিদ্যা : উদ্ভিদবিদ্যায় মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। উদ্ভিদবিদদের মধ্যে ইবনে বাতরের নাম উল্লেখযোগ্য। লতাপাতা সম্পর্কিত তার তথ্যবহুল গ্রন্থটি আজো সবার কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তা ছাড়া মুসলমানরা ভূতত্ত্ব ও প্রাণিতত্ত্বে উন্নতি সাধন করেছিলেন।
পদার্থবিদ্যা : জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো মুসলমানরা পদার্থবিদ্যায় ব্যাপক অবদান রেখেছেন। পদার্থবিজ্ঞানে যেসব মনীষী অসামান্য অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে ইবনে রুশদ, আলবেরুনি, আল-খারেজমি,
Информация по комментариям в разработке