Bangladesh All Fish Photo (বাংরাদেশের বিভিন্ন প্রজাতির মাছের নাম ও ছবি):
বহুকাল পূর্ব থেকে একটা কথা প্রচলিত, মাছে-ভাতে বাঙালি। বাংলাদেশের প্রাচুর্যের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই মাছের অবস্থান। একটা সময়ে গোলা ভরা ধানের পরেই পুকুর ভরা মাছ। বাংলাদেশে এখনও মাছের আকাল পড়েনি। কিছুটা মহার্ঘ হলেও এখনকার পুকুর, খাল, নদী-নালা, হাওর-বিলে এখনও পর্যাপ্ত মাছ ধরা পড়ে। মৎস্য বিজ্ঞানীদের মতে, বাংলাদেশ প্রায় ২৭০ প্রজাতির মিঠা পানির মাছ আছে। এর মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, আইড়, শিং, মাগুর, কৈ, শোল, টাকি, ফলুই, চিংড়ি, পাঙ্গাশ, পুটি, চাপিলা, বোয়াল, মোলা, বাইন, বাটা, পাবদা, গজার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তাছাড়া বাংলাদেশের জেলেরা প্রায় ১০২ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ধরে সারা বছরে। রূপচান্দা, ছুরি, মেটে, কোরাল, পোয়া, লইট্যা, ইলিশ, লাক্ষা, হাঙর ইত্যাদি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। ঋতুচক্র অনুযায়ী সাধারণত: পৌষ-মাঘ মাসে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়ে। বর্ষাকাল ও ইলিশ ধরার উপযুক্ত সময়। সমুদ্রে ইলিশ ধরার জন্য জেলেরা সাধারণত ইলিশ চান্দি, টানবেড়, জগৎবেড় প্রভৃতি জাল ব্যবহার করে। ইলিশের মৌসুমে পর্যাপ্ত ইলিশ ধরা পড়লে জেলেদের মুখ হাসিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠে। সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যেও আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। তখন ঘরে ঘরে নানা বৈচিত্র্যে রান্না করা হয় নানা পদের ইলিশ। ভাপা ইলিশ, সর্ষে ইলিশ, নোনা ইলিশ, ভাজা ইলিশ-সবই ইলিশ রান্নার প্রকারভেদ।
বাংলাদেশে বিদেশি মাছও ক্রমশ: জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ১৯৫৪ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে সর্বপ্রথম এদেশে আমদানী করা হয় তেলাপিয়া মাছ। এ মাছের আদি প্রজন্ম কিন্তু আফ্রিকায় সৃষ্টি। জনপ্রিয় বিদেশি মাছের তালিকায় আরও আছে নাইলেটিকা। এটি আমদানী করা হয় ১৯৭০ সালে। এ ছাড়াও আছে চীন দেশীয় কার্প, সিলভার কার্প, গ্লাসকার্প ইত্যাদি এবং আফ্রিকান মাগুর। এসব মাছের জনপ্রিয়তার মূল কারণ হল, যে কোন পরিবেশে একটু পরিচর্যা পেলে এরা খুব দ্রুত বেড়ে উঠে এবং স্বাদের দিক থেকেও অন্যান্য মিঠে পানির মাছের তুলনায় তেমন কম কিছু নয়।
আমাদের জাতীয় উৎপাদনে মাছের অবদান ৩.৩ শতাংশেরও বেশি। কৃষিখাতের ৬.৯ শতাংশ আয় হয় মাছ থেকে। মাছ দেশের চতুর্থ রপ্তানি পণ্য যা থেকে মোট রপ্তানি আয়ের ৭.৫ শতাংশ আয় আসে। দেশের অভ্যন্তরীণ খাল, নদী, বিল এবং হাওর থেকে ৭৫ শতাংশ মাছ পাওয়া যায়। বাকী ২৫ শতাংশ মাছ সংগৃহীত হয় সমুদ্র থেকে।
সম্প্রতি মৎস্য অধিদপ্তর প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে বাংলাদেশে দিন দিন মাছের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কথাটা সর্বাংশে সত্য। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা এর প্রধান কারণ হিসেবে পরিবেশ দূষণকে দায়ী করেছেন। অন্যান্য উপ-প্রধান কারণগুলোর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলেন : জলাশয়ে পানি প্রবাহ নানা কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে। তাছাড়া মাছের খাদ্য-শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস হচ্ছে। মিঠা পানিতে বাড়ছে লবণাক্ততা। ফলে প্রাকৃতিক কারণেই মাছ কমে যাচ্ছে।
মাছ শুধু মানুষের রসনা তৃপ্ত করে তা নয়; সাহিত্যের উপাদান হয়ে মানুষের হৃদয় মনকেও উজ্জীবিত করে। কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে মাছ নিয়ে সাহিত্য রচনায় আগ্রহের কমতি নেই। মাছ নিয়ে এ যাবত রচিত হয়েছে কবিতা-উপন্যাস-গল্পসহ বহু রকমের শিশুতোষ রচনা, ছড়া, বাণী ও প্রবাদ-প্রবচন। বহু বছর আগে মাছ নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত। কবির একটি কবিতার নাম ‘তপসে মাছ’। তিনি এ মাছের দেহে মোহন মনির প্রভা’ দেখেছেন। তপসে মাছ কাঁচা খাবার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন কবি। শেষ পর্যন্ত সাধ মিটিয়েছেন তেলে ভাজা মাছ খেয়ে।
Информация по комментариям в разработке