আসসালামুয়ালাইকুম প্রিয় দর্শক,
#alor_pother_musaphir চ্যানেলে আপনাদেরকে স্বাগতম,
সন্তান জীবনের শোভন ও সৌন্দর্য। সুসন্তান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ। সন্তানের চোখে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন মা-বাবা। আদর্শ সন্তানের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মান বৃদ্ধি হয় তাঁদের। মৃত্যুর পরও তার সুফল পেতে থাকেন অনন্তকাল। পবিত্র কোরআনে সন্তানকে আল্লাহ তাআলা জীবনের সৌন্দর্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘সম্পদ ও সন্তান পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য।’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৪৬)
সন্তান যেন জীবনের সম্পদ ও শোভা হয়ে ওঠে এ জন্য ইসলাম মা-বাবাকেও কিছু নির্দেশনা দিয়েছে। তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি নির্দেশনা আজকের ভিডিওতে আলিছনা করা হলো—
১. আদর্শ মা নির্বাচন : সুসন্তান লাভের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো সন্তানের জন্য আদর্শ মা নির্বাচন করা। অর্থাৎ এমন নারীকে বিয়ে করা, যে সন্তানের আদর্শ মা হতে পারবে। হাদিসে বিয়ের আগে মেয়ের চারটি গুণাগুণ দেখতে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নারীদের চারটি গুণ দেখে বিয়ে করো—তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার দ্বিনদারি। তবে তুমি দ্বিনদারিকে প্রাধান্য দেবে। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৯০)
হাদিসে দ্বিনদারিকে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে। দ্বিনদারি অর্থ শুধু ইবাদত পালন নয়। দ্বিনদারির অর্থ হলো, আল্লাহ বর্ণিত সব বিধান মান্য করে চলা। স্ত্রী হিসেবে, ঘরের বউ হিসেবে, সন্তানের মা হিসেবে তার করণীয়গুলো পালন করা।
২. সুসন্তান লাভের দোয়া করা : সন্তান আল্লাহর দান। আল্লাহ যাকে খুশি তাকে সন্তান দান করেন এবং যাকে খুশি দান করেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যাসন্তান দেন, যাকে ইচ্ছা পুত্রসন্তান দেন। আবার কাউকে কন্যা ও পুত্রসন্তান উভয়টি দেন। যাকে ইচ্ছা তিনি বন্ধ্যা করেন। নিশ্চয়ই তিনি সব কিছু জানেন এবং সব কিছুতে সক্ষম।’ (সুরা : আশ-শুরা, আয়াত : ৫০)
আর সুসন্তান আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহ লাভের জন্য আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করা আবশ্যক। আল্লাহ কোরআনে মানুষকে সুসন্তান লাভের দোয়া শিখিয়েছেন। এই দোয়াকারী মা-বাবার প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, ‘এবং যারা বলে, হে আমাদের প্রভু, আমাদের দান করুন চোখ শীতলকারী স্ত্রী ও সন্তান। আমাদের আপনি খোদাভীরুদের নেতা নির্বাচন করুন।’ (সুরা : ফোরকান, আয়াত : ৭৪)
৩. ছেলে ও মেয়েতে বৈষম্য না করা : সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে—তার জন্মে আনন্দ প্রকাশ করা মা-বাবার জন্য ঈমানের পরিচায়ক। আল্লাহ তাআলা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের জন্মকে কোরআনে সুসংবাদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ইয়াহইয়া (আ.) সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে জাকারিয়া, নিশ্চয়ই আমি তোমাকে পুত্রসন্তানের সুসংবাদ দিচ্ছি। তার নাম ইয়াহইয়া। এই নাম আগে কারো রাখা হয়নি।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৭)
ছেলে জন্মের খবর যেমন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, মেয়ে জন্মের সংবাদও আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। যারা এই সুসংবাদে সন্তুষ্ট হতে পারে না, মনে মনে ব্যথিত হয়, আল্লাহ তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেওয়া হয়, মনঃকষ্টে তাদের চেহারা কালো হয়ে যায়। তাদের যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে—তার কারণে তারা নিজ সম্প্রদায়ের লোক থেকে মুখ লুকিয়ে রাখে। তারা ভাবে, এই সন্তান রাখবে, নাকি মাটিতে পুঁতে ফেলবে। সাবধান! তাদের সিদ্ধান্ত কতই না নিকৃষ্ট। (সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৮-৫৯)
অন্য আয়াতে আল্লাহ কন্যাসন্তানের মা-বাবাকে এই সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন, ‘অনেক পুরুষ নারীর সমকক্ষ নয়।’ (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৩৬) অর্থাৎ তোমাদের যে কন্যাসন্তান দান করা হয়েছে, তা অনেক পুরুষের তুলনায় উত্তম হতে পারে। অনেক পুরুষ অনেক নারীর তুলনায় অধমও হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছেলে-মেয়ে-নির্বিশেষে সবার প্রতি ন্যায়ানুগ আচরণ করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করো, সন্তানদের ভেতর সুবিচার করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৫৮৭)
৪. সুন্দর নাম রাখা : সুন্দর ও অর্থবহ নাম সন্তানের প্রথম অধিকার। রাসুলুল্লাহ (সা.) সন্তান জন্মের সাত দিনের ভেতর তার নাম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সন্তানের নাম সুন্দর ও অর্থবহ হওয়া আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইসলাম গ্রহণের পর অনেক সাহাবির নাম পরিবর্তন করে দিয়েছিলেন। কেননা তাঁদের নাম ইসলামী ভাবাদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল অথবা তাঁদের নাম অর্থপূর্ণ ছিল না। জয়নব (রা.)-এর নাম ‘বাররাহ’ পরিবর্তন করে জয়নব রাখেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬১৯২)
সন্তানের নাম রাখার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন তোমাদের নামে এবং তোমাদের পিতাদের নামে ডাকা হবে। সুতরাং তোমরা সুন্দর নাম রাখো।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৪৮)
একইভাবে তিনি অর্থহীন, শ্রুতিকটু ও মন্দ অর্থের নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ছেলেদের নাম ইয়াসার, রাবাহ, নাজাহ ও আফলাহ রেখো না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২১৩৬)
৫. উত্তম প্রতিপালন : শিক্ষা-দীক্ষা, পারিবারিক প্রতিপালন ও পারিপার্শ্বিকতা শিশুর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। তাই সন্তান প্রতিপালনে মা-বাবা ও অভিভাবকদের অনেক বেশি যত্নশীল হতে হবে। সন্তানের সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলেই ভবিষ্যতে সে আদর্শ মানুষ হয়ে উঠবে। পরিবার, দেশ ও জাতির সম্পদে পরিণত হবে। ইসলাম শিশুর প্রতিপালনে কয়েকটি বিষয় লক্ষ রাখতে বলেছে। তা হলো—
ক. ঈমানি শিক্ষা নিশ্চিত করা
খ. চারিত্রিক শিক্ষা নিশ্চিত করা
গ. বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ নিশ্চিত করা
ঘ. শারীরিক সুস্থতা ও প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা
ঙ. মানসিক স্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা
চ. সামাজিক শিক্ষা তথা সামাজিকীকরণ নিশ্চিত করা
#hadis_bangla #হাদিসের_কথা #bangla_hadis #hadis #নবীদের_জীবন_কাহিনী #হাদিসের_কাহিনী
Информация по комментариям в разработке