History of Silda

Описание к видео History of Silda

লেখাটি Ardhendu Bikash Rana Rana facebook থেকে সংগৃহিত।

#silda #jhargramtour #jhargram #medinipur #মেদিনীপুর
শিলদা একটি প্রাচীন বর্ধিষ্ণু জনপদ। জঙ্গলমহল বলতে আমাদের চোখের সামনে অশিক্ষা, দারিদ্রতা, আদিবাসী ও উপজাতি, কৃষ্ণ-কালো রুগ্ন-অপুষ্টিতে আক্রান্ত একটি জনসমাজ ও সংস্কৃতির যে কোলাজ ভেসে ওঠে তা এই শিলদা নয়। এখানকার অধিবাসীরা বলতে গেলে শপ্রতিশত শিক্ষিত, শতকরা ষাট ভাগ উচ্চশিক্ষিত, কয়েকশত বছরের ধনী ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস। বড় ব্যবসায়ী, ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, অধ্যাপক, শিক্ষকের বাস। অনেকেই বিশাল ভূসম্পত্তির মালিক। শিলদা গ্রামীণ পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসায় কেন্দ্র।
শিলদার পশ্চিমপ্রান্তে কয়েকশত একরের এক বিশাল প্রাকৃতিক ঝিল। বড় বড় শিলা খন্ডের মাঝে সচ্ছ জলপূর্ণ। প্রাকৃতিক ঝিল একটি ছোট নদীর উৎস মুখ। এই নদীটি ডুলুং নদীর একটি শাখা নদী। অনেকে বলেন, বড় বড় শিলাখন্ডময় দহের (দহ-জলাভূমি) জন্য তার তীরবর্তী জনপদের নাম হয় শিলাদহ পরে তা পরিবর্তিত হয়ে শিলদহ আরও পরে শিলদা নামে পরিচিত হয়। আবার এক আদিবাসী বৃদ্ধের কাছ থেকে শুনেছি যে শিলদা নামটি সাঁওতালী বাক্য ‘শৈল দাঃ ঞু কঃ হিজুআ’ থেকেই এসেছে। এই বাক্যটির অর্থ যেখানে ‘হরিণেরা জল পান করতে আসে’ [শৈল-হরিণ, দাঃ-জল, ঞু-পান, হিজুআ-আসে, কঃ-বহুবচন]। হয়তো অনেক আগে অরণ্যবেষ্টিত এই সরোবরে হরিণেরা জল পান করতে আসত। এই বাক্যটি সংক্ষিপ্ত হয়ে ‘শৈলদাঃ’ হয় পরে যা শিলদা নামে পরিবর্তিত হয়। শিলদার ভৌগলিক অববস্থান খুব ভাল। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে পশ্চিমে তেত্রিশ কিমি দূরে। শিলদা থেকে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝিলিমিলি, ঘাটশিলা ও জামশেদপুর যাবার জংশনস্থল। অদূরেই বিস্তীর্ণ শালের জঙ্গল, কাকড়াঝোড়, ঝিলিমিলি।

শিলদা রাজবাড়ীকে কেন্দ্র করে ভ্রমণের আদর্শস্থল হতে পারে। পাশেই ভৈরব ভগবানের প্রাচীন ভগ্ন মন্দির যেখানে আজও পূজা-অর্চনা হয়।এমন একদিন ছিল যেদিন শিলদায় রাজা ছিল, রাণী ছিল। আজ আর কেউ নেই পড়ে আছে রাধামাধবের বিগ্রহহীন মন্দির, ঠাকুরদালান, দূর্গের এক অংশ, প্রাকার ও প্রাসাদের ভগ্নাংশ। শিলদা ‘ঝাঁটিবনী’ নামেও জানা যেত। ওঁড়গোদা থেকে এসে রাজা যেদিন শিলদার রাজপ্রাসাদে বসবাস শুরু করলেন সেদিন থেকে ঝাঁটিবনীর চেয়ে শিলদা নামেই বেশী পরিচিতি লাভ করতে থাকে। অনেক দিন আগে, প্রায় ১৪০০ সালের গোড়ার দিকে, ডোম সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি ঝাঁটিবনীতে শাসন চালাত। ডোম সম্প্রদায়ের লোকেরা তাকে রাজা বলে মানত। ‘ডামাড়’ নামক স্থানে যে ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া যায় ওখানেই ছিল ডোম রাজার গড়। শিলদার সিংহবংশীয় শেষ রাজা বিজয় সিংহের পূর্বপুরুষেরা ডোম রাজাকে বিতাড়িত করে শিলদা রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ওড়গোঁদাতে রাজধানী করে রাজত্ব শুরু করেছিলেন।

রাজা মেদিনীমল্ল রায় নামে দক্ষিণদেশীয় রাজকুমার ১৫২৪ সালে। শিলদার সিংহবংশীয় শেষ রাজা বিজয় সিংহকে পরাজিত করে শিলদা রাজ্যে দখল করেন। তিনি ওড়গোঁদা থেকে রাজধানী সরিয়ে এনে শিলদাতে নতুন প্রাসাদ গড়েন ও ৪১ বছর রাজত্ব করেন। তার পুত্র মঙ্গলরাজ রায় ৫৭ বছর ও রাজা মঙ্গলরাজ রায়ের পুত্র গৌরহরি রায় ৬৭ বছর (১৬৯৯ সাল) রাজত্ব করেছিলেন। গৌরহরির তিন পুত্র ছিল। বলরাম, হরিশ্চন্দ্র ও মানগোবিন্দ। প্রথমে বলরাম, পরে বলরাম মারা গেলে হরিশ্চন্দ্র রাজা হন। ইনিও নিঃসন্তান অবস্থায় মারা গেলে ১৭৮৭ সালে মানগোবিন্দ শিলদা রাজ্যের রাজা হন।

বৃটিশদের দশশালা বন্ধোবস্তর সময় শিলদা রাজ্যের রাজা ছিলেন মানগোবিন্দ রায়। এনার সাত রানী ছিল। বড় রানীর নাম ছিল কিশোরমনি। রানীদের মধ্যে ছয় রানীর কোন সন্তান ছিল না। এক রানীর এক কন্যা সন্তান ছিল। নাম ছিল রাজকুমারী রাজলক্ষী। রাজকুমারী রাজলক্ষীর বিবাহ হয় ঝাড়গ্রামের রাজা রঘুনাথ মল্লদেবের সাথে। রাজা মানগোবিন্দ ১৮০৫ সালে মারা যান। এনার মৃত্যুর পর অন্য কোনো উত্তরাধিকারী না থাকার জন্য বড়রানী কিশোরমনি শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি দেওয়ানের পুত্রকে দত্তক নিয়ে ১৮৪৮ সালে মারা যান। কিন্তু বৃটিশ কোম্পানির নিয়ম অনুসারে বৃটিশেরা রাজত্ব হস্তগত করে। পরে রাজকুমারী রাজলক্ষীর পুত্র চন্ডীচরণ মল্ল উগালষন্ডদেব রাজ্যের উত্তরাধিকারী পান ১৮৫৮ সালে। কিন্তু তিনি শিলদা এস্টেটের প্রতি নজর দেননি বা প্রয়োজন মনে করেননি। তখন বার্ষিক কর না পেয়ে বৃটিশরা শিলদা রাজ্যকে নিলামে বিক্রি করে দেন, মেদিনীপুরের কর্নেলগোলার ভোলানাথ দত্তের কাছে। কিন্তু ভোলানাথ দত্ত শিলদা এস্টেট সঠিকভাবে চালাতে পারেননি। এরপর ইংরেজরা শিলদা রাজ্য ক্রোক করে অধিগ্রহণ করে নেয়। শিলদা এস্টেট ক্রোক হওয়ার সাথে সাথে শিলদা রাজবংশ ও শিলদা রাজ্যের অবসান ঘটে।

প্রসঙ্গত, ঝাড়গ্রামের রাজা রঘুনাথ মল্ল উগালষন্ডদেব দীর্ঘদিন রাজত্বের পর মারা যান; তাঁর শ্বশুরবাড়ী শিলদার এই রাজবাড়ীতেই, তিনি শিলদার রাজকুমারী রাজলক্ষীদেবীকে বিবাহ করে ছিলেন। তাঁদের দুই পুত্র, কুমার চন্ডীচরণ মল্ল উগালষন্ডদেব ও কুমার গঙ্গাচরণ মল্ল উগালষন্ডদেব। কুমার চন্ডীচরণ মল্ল উগালষন্ডদেব, জামবনী রাজপরিবারের রাজা ঈশ্বরচন্দ্র ধবলদেবের কন্যা, রাজকন্যা কুমুদকুমারীকে বিবাহ করেন। চিল্কীগড়ে জামবনী রাজপরিবারের রাজবাড়ী আজও নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চিল্কীগড়ের কনকদূর্গার মন্দির এই রাজপরিবারই নির্মাণ করিয়েছিলেন। এদেরই সুসন্তান রাজা নরসিংহ মল্ল উগাল ষন্ডদেব। এই শিক্ষানুরাগী, যার অবদান শুধু ঝাড়গ্রামবাসী কেন, জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকার লোক কোনদিন ভুলবে না। মা কুমুদকুমারীর নামে বিদ্যালয় বানিয়েছেন। তিনি ময়ূরভঞ্জের রাজকন্যা রাণী বিনোদমঞ্জরীকে বিবাহ করেন। এই রাণীর নামে বালিকা বিদ্যালয়, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ, পলিটেকনিক, আই.টি.আই. সবই তাঁর দানের অবদান।

শিলদার মন্দির ও প্রাসাদ মাকড়া পাথরের স্ল্যাব দিয়ে বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলির শৈলীতেই তৈরী। বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলির চেয়ে কোন অংশে কম নয় স্থাপত্য-সৌন্দর্য্যে। ভালোভাবে সংস্কার করে প্রচার করলে আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ার যোগ্য। তবে এর জন্য শিলদার অধিবাসীদের এগিয়ে আসা দরকার।

Комментарии

Информация по комментариям в разработке