Скачать или смотреть Amritswar Golden temple | অমৃতসর স্বর্ণমন্দির ভ্রমণ | খাওয়া দাওয়া থাকা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে |

#amritsargoldentempel #goldentempel #amritsar

অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির, যা শ্রী হরমন্দির সাহিব বা দরবার সাহিব নামেও পরিচিত, শিখ ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র তীর্থস্থান। এটি কেবল শিখদের জন্যই নয়, সকল ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। নিচে এর বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হলো:
নামকরণ ও পরিচিতি
আসল নাম: হরমন্দির সাহিব (ঈশ্বরের বাসস্থান) বা দরবার সাহিব।
কথ্য নাম: স্বর্ণ মন্দির। উনিশ শতকে মহারাজা রণজিৎ সিং মন্দিরের উপরিভাগ সোনায় মোড়ানোর পর থেকেই এটি 'স্বর্ণ মন্দির' নামে পরিচিতি লাভ করে।
শহরের নামকরণ: মন্দিরের কেন্দ্রে অবস্থিত পবিত্র জলাশয় 'অমৃত সরোবর'-এর নামানুসারে এই শহরের নামকরণ করা হয় 'অমৃতসর'।
ইতিহাস ও নির্মাণ
প্রতিষ্ঠা: চতুর্থ শিখ গুরু, গুরু রাম দাস ১৫৭৭ সালে এখানে একটি গুরুদ্বারা নির্মাণের কাজ শুরু করেন।
সম্পূর্ণকরণ: পঞ্চম শিখ গুরু, গুরু অর্জন দেব মন্দিরের প্রধান কাজ শুরু করেন এবং ১৬০৪ সালে এটি সম্পূর্ণ করেন। তিনি শিখদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব প্রথম এই মন্দিরে স্থাপন করেন।
পুনর্নির্মাণ ও স্বর্ণাবরণ: মুঘল এবং আক্রমণকারী আফগান সেনাবাহিনী দ্বারা মন্দিরটি বারবার ধ্বংস হওয়ার পর শিখরা এটি পুনর্নির্মাণ করে। ১৮৩০ সালে মহারাজা রণজিৎ সিং মন্দিরটিকে মার্বেল ও তামা দিয়ে পুনর্নির্মাণ করেন এবং এর উপরিভাগ সোনায় মোড়েন, যা এর বর্তমান পরিচিতির মূল কারণ।
গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা: ১৯৪৮ সালে অপারেশন ব্লু স্টার-এর সময় মন্দিরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার পর এটি আবার পুনর্নির্মাণ করা হয়।
স্থাপত্য ও নকশা
অবস্থান: মন্দিরটি অমৃত সরোবর নামে এক বিশাল পবিত্র জলাশয়ের মাঝখানে নির্মিত হয়েছে।
প্রবেশপথ: মন্দিরের চারটি মুখ্য দ্বার রয়েছে, যা চারটি দিকে খোলে। এর তাৎপর্য হলো, এটি জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য উন্মুক্ত।
গঠনশৈলী: মন্দিরের সিঁড়িগুলো উপরের দিকে না গিয়ে বরং নীচের দিকে নামে, কারণ সম্পূর্ণ মন্দির শহরের সমতল থেকে নীচুতে তৈরি করা হয়েছে। এটি মোগল ও ভারতীয় স্থাপত্যকলার এক অনন্য মিশ্রণ। সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি এই মন্দিরের দেয়ালগুলিতে হাতে আঁকা বহু ছবি ও কারুকার্য দেখা যায়।
আকাল তখত: স্বর্ণ মন্দির অকাল তখতের (অনন্ত সিংহাসন) ওপর স্থাপিত, যা পাঁচটি তখতের মধ্যে প্রথম ও সবচেয়ে পুরনো।
ধর্মীয় গুরুত্ব ও তাৎপর্য
শিখদের পবিত্রতম স্থান: এটি শিখ ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক কেন্দ্র।
সর্বধর্ম সমন্বয়: মন্দিরটি সকল ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত, যা শিখ ধর্মের উদারতার প্রতীক।
লঙ্গর: স্বর্ণ মন্দিরে পৃথিবীর বৃহত্তম রান্নাঘর বা 'লঙ্গর' রয়েছে, যেখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ বিনামূল্যে খাবার গ্রহণ করেন। এটি 'সেবা' (নিঃস্বার্থ সেবা) ধারণার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গুরু নানক দেবের শিক্ষানুসারে, এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলকেই খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রতিদিন প্রায় দুই লক্ষ রুটি তৈরি হয় এখানে।
দর্শনের সময় ও নিয়মাবলী
সময়: স্বর্ণ মন্দির ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে। তবে, মূল মন্দিরের ভিতরে প্রবেশের জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচী রয়েছে। সাধারণত সকাল ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা মূল মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন।
নিয়ম:
মন্দির প্রাঙ্গণে প্রবেশের আগে জুতো এবং মোজা খুলে রাখতে হয়।
শালীন পোশাক পরা বাধ্যতামূলক।
পুরুষ ও মহিলা নির্বিশেষে সকলকে মাথা ঢেকে প্রবেশ করতে হয়। প্রয়োজনে মন্দিরের প্রবেশপথেই মাথা ঢাকার জন্য কাপড় পাওয়া যায়।
মন্দিরের ভিতরে গুরুবাণী শোনার সময় মাটিতে বসতে হয়।
স্বর্ণ মন্দির শুধু একটি উপাসনালয় নয়, এটি শান্তি, সাম্য এবং সেবার এক অনন্য প্রতীক। এর অসাধারণ স্থাপত্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য এটিকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থানে পরিণত করেছে।