Скачать или смотреть মেসোপটেমিয়া : দজলা ও ফোরাত নদী-তীরের প্রাচীন সভ্যতা | Mesopotamian Civilization | World History

মেসোপটেমিয়া হলো বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা, যা গড়ে উঠেছিল দজলা (Tigris) ও ফোরাত (Euphrates) নদীর তীরে। এখানে জন্ম নিয়েছিল কৃষি, নগরসভ্যতা, আইন, লেখা ও বিজ্ঞানের প্রথম দিকের অনেক আবিষ্কার।

👉 এই ভিডিওতে জানুন মেসোপটেমীয় সভ্যতার ইতিহাস, সুমেরীয়রা, ব্যাবিলনীয়রা, আসিরীয়রা এবং তাদের সাংস্কৃতিক অবদান সম্পর্কে।
👉 মানব সভ্যতার সূতিকাগার মেসোপটেমিয়ার বিস্ময়কর ইতিহাস জানতে ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন।


পশ্চিম এশিয়ার দুটি গুরুত্বপূর্ণ নদী হলো টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস। টাইগ্রিস পূর্ব-তুরস্কের পবর্তমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে সিরিয়া ও ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। টাইগ্রিস ইংরেজি শব্দ, টাইগ্রিসের আরবি নাম দজলা। অন্যদিকে ইউফ্রেটিস নামের আরও একটি নদী তুরস্কের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে সিরিয়া ও ইরাকের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টাইগ্রিস নদীর সাথে মিলিত হয়। ইউফ্রেটিস নদীর আরবি নাম ফোরাত। এই দুই নদীর অববাহিকায় প্রাচীনকালে এক সমৃদ্ধ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল, ইতিহাসবিদগণ এই সভ্যতার নাম রাখেন মেসোপটেমিয়া।
মেসোপটেমিয়া নামে কোনো দেশ নেই। পাশাপাশি অবস্থিত কয়েকটি দেশে বিকশিত হয়েছিল এই সভ্যতা। প্রাচীনকালে গ্রিস দেশের ইতিহাসবিদেরা সবার আগে এই অঞ্চলের ইতিহাস লেখেন। আর লিখতে গিয়ে তারা এমন নাম রাখেন। ‘মেসস’ আর ‘পটেমাস’ এই দুই গ্রিক শব্দ মিলে হয়েছে ‘মেসোপটেমিয়া’। যার অর্থ হলো ‘দুই নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চল’।
টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস বা দজলা ও ফোরাত এই দুটি নদীর ভূমিকা ছিল মেসোপটেমীয় সভ্যতা গড়ে তুলতে। এই দুই নদীর পলি জমে এখানে প্রাচীনকালে একটি উর্বর ভূখণ্ড গড়ে ওঠে। ভুখণ্ডটি দেখতে অনেকটা বাঁকা চাঁদের মতো। ইংরেজিতে এমন চাঁদকে বলে ক্রিসেন্ট। এ কারণে অনেক ইতিহাসবিদ মেসোপটেমীয় সভ্যতা গড়ে তোলা ভূখণ্ডকে বলেন, ‘ফারটাইল ক্রিসেন্ট’। অর্থাৎ উর্বব বাঁকা চাঁদ।

এই বাঁকা চাঁদের মতো ভূখণ্ডটিই প্রাচীন মেসোপটেমিয়া, আজকের ইরাক দেশে। এই অঞ্চলের উত্তর সীমায় রয়েছে আর্মেনিয়ার পাহাড়ি এলাকা, পশ্চিম ও দক্ষিণে ধু-ধু আরব মরুভূমি, দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে গেছে পারস্য উপসাগর। পূর্ব দিকে রয়েছে আরেকটি পাহাড়ি দেশ। নাম তার এলাম আর বাকি পশ্চিমে বিশাল জলরাশি নিয়ে গর্জন করছে ভূমধ্য সাগর।
মেসোপটেমিয়ার পূর্ব দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দজলা, আর পশ্চিম দিক দিয়ে ফোরাত। নদী দুটি মেসোপটেমিয়ার বুক চিরে এগিয়ে গেছে দক্ষিণে। এরপর পশ্চিমে বাঁক নিয়ে মিশেছে পারস্য উপসাগরে।
দজলা-ফোরাত নদীতে বছরে দু’বার বন্যা হতো। বন্যায় দুই কূলের ভূখণ্ড প্লাবিত হতো। তাই পলিমাটি জমে উর্বর হতো গোটা ভূমি। তবে. প্রকিতবছর নিয়ম করে একই সময়ে বন্যা হতো না। এছাড়া বন্যার পাশাপাশি প্রচণ্ড ঝড়ও বয়ে যেত। বন্যার পানি সরে গেলে সেখানে জন্মাত আগাছা আর ঝোপঝাড়। তাই এসব পরিষ্কার করে ভূমিকে চাষের উপযোগী করতে অনেক শ্রমশক্তির প্রয়োজন হতো। আবার মেসোপটেমীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালে হতো প্রচণ্ড খরা। তাই সে সময় কৃষির জন্য প্রয়োজন ছিল সেচব্যবস্থার প্রচলন করা। এ কারণেও দরকার পড়ত অনেক শ্রমিকের। মেসোপটেমিয়ার প্রাকৃতিক অবস্থা সে সুযোগও করে দিয়েছিল। অঞ্চলটির রয়েছে খোলা সীমান্ত। আরব মরুভূমি দিয়ে প্রাচীনকাল থেকে সেমেটিক ভাষায় কথা বলা যাযাবর আরবরা এখানে এসে বসতি গড়ে তোলে। পূর্ব ও উত্তর সীমান্ত দিয়ে ইরান ও আর্মেনিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষও বসতি গড়ে দজলা-ফোরাতের তীরে। এসব মানুষই মিলেমিশে একটি কৃষিসভ্যতা গড়ে তুলেছিল মেসোপটেমিয়ায়। নদী ও সমুদ্রপথে তারা বাণিজ্যও করত।

নগরসভ্যতা গড়ার আগেও মেসোপটেমীয় অঞ্চলে মানুষের বসতি ছিল। সভ্যতার আগের এই পর্বকে বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগ। এ যুগের মানুষ খাদ্য সংগ্রহ, খাদ্য উৎপাদনসহ সব কাজে প্রধানত পাথরের হাতিয়ার ব্যবহার করত। আর এ কারণে এযুগকে পাথর যুগও বলা হয়। পণ্ডিতেরা নানা ধরনের ও আকারের পাথরের হাতিয়ার এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখে পাথরের যুগকে মোটা দাগে দুটি ভাগে ভাগ করেন। প্রথম ভাগটির নাম দেওয়া হয় পুরনো পাথরের যুগ। এ যুগপর্বে মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে জানত না। ক্ষুধা মেটানোর জন্য পশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ ছিল তাদের প্রধান কাজ। আর শেষেরটি নতুন পাথরের যুগ। এ সময় পশু শিকারের পাশাপাশি মানুষ কৃষিকাজ শিখে ফেলে। নদীতীরের উর্বর ভূমিতে এসে বসতি গড়ে তোলে। শুরু হয় তাদের কৃষিজীবন।
নতুন পাথরের যুগে ফোরাত নদীর উর্বর তীরে মানুষ বসবাস শুরু করেছিল। প্রথম গ্রামটি গড়ে ওঠে আল ইউবেইদ নামের অঞ্চলে। তাই এ যুগের মানুষের সংস্কৃতিকে বলা হয় ইউবেইদ সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল আজ থেকে প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছর আগে। নলখাগড়ার গাছগাছালি আর কাদামাটি দিয়ে এখানে মানুষ ঘর বানাত। কৃষিকাজে ব্যবহার করা কাস্তে ও ছুরি পাওয়া গেছে এখানে। পাওয়া গেছে রঙিন মাটির পাত্র আর পাথরের মূর্তি।
ইউবেইদ অঞ্চলের আরও দক্ষিণে আরেকটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। এই অঞ্চলটির নাম ওয়ারকা। এ জন্য সংস্কৃতিটির নাম দেওয়া হয়েছে ইউরুক সংস্কৃতি। এ অঞ্চলে পাওয়া গেছে সাত হাজার বছর আগের ধর্মমন্দির। চমৎকার মাটির পাত্রও বানাতে পারত ইউরুক সংস্কৃতির মানুষেরা। দেয়ালের গায়ে তারা নজরকাড়া ছবিও আঁকত।
এভাবে মেসোপটেমিয়ায় সভ্যতা গড়ার জন্য যেন সব আয়োজন সম্পন্ন করে রেখেছিল নতুন পাথর যুগের মানুষেরা।

সূত্র : প্রাচীন সভ্যতা সিরিজ : মেসোপটেমিয়া, এ কে এম শাহনাওয়াজ


#Mesopotamia #AncientCivilization #WorldHistory #RiverValleyCivilization #Tigris #Euphrates #Sumerians #Babylonians #Assyrians #মেসোপটেমিয়া #প্রাচীনসভ্যতা