#সন্ন্যাসী

Описание к видео #সন্ন্যাসী

লালকাছ:

বাইরের ঘরে চলছে মেকাপম্যানের কাজ। সাদা রঙে সাজানো হচ্ছে শিবঠাকুরকে। শিব আর পার্বতীর সাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বেরিয়ে গেছে দোলকাছে। শিব আর পার্বতী সারা পাড়া ঘুরে ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণের আশ্বাস দিয়ে ঘরে ফিরবে। তাদের পিছে পিছে দল বেধে সঙ্গ দেয় পারার শিশু- কিশোর আর দোলকাছ ভক্তরা। পারার শিব ভক্তরা শিবের ছোঁয়ায় খাদ্যদ্রব্য পথ্য বানিয়ে রাখছেন। যা কিনা রোগ-শোকে ব্যবহৃত হবে।



পরে চলে লালকাছের মেকাপ। খালি গায়ে একটা হাফ প্যান্ট পরে, একজনের পর একজন বসবে আর মেকাপ দেয়া হবে। মেকাপ বলতে সিদুর রঙের পাউডার, নারকেল তেলে মিশিয়ে তৈরি করা হয় রং। সেই রং সারা শরীরে মাখিয়ে দেয়া হয়। মাথায় রঙিন কাগজের মালা, মুখে জবা ফুল আর হাতে তলোয়ার। জবা ফুল মুখের সৌন্দর্য, মাথে মালা দেহের বেশ। দলপতির হাতে বাড়তি থাকে একটা জারজ সন্তানের মাথা, যা কিনা সন্ন্যাসীর শক্তি বাড়িয়ে দেয় বহুগুন। লালকাছের বিষয় হচ্ছে মহাদেবের সঙ্গে যুদ্ধ। ধরনীর সকলে।
জঙ্গলি, অসভ্য, বর্বর। ধরনীপুত্ররা তাই জগতের ধ্বংস আর হিংসা টিকিয়ে রাখতে গায়ে রং মেখে অস্ত্র হাতে মহাদেবের সঙ্গে যুদ্ধ লিপ্ত হয়।

সংক্রান্তির দিন দুপুরের পর প্রতিটি পাড়া থেকে একটি করে দল বের হয়। প্রতিটি দলে থাকে ১০/১২ জন করে। তাদের মধ্যে সবাই আবির মেখে লাল রঙ ধারন করে। সবার ডান হাতে থাকে তলোয়ার আর বা হাতে একটি মৃত মানুষের মুণ্ডু, মুখে রক্ত জবা ফুল। কোমরে পেঁচানো থাকে একটুকরো লাল সালু কাপড় আর মাথায় আর গলায় রঙ্গিন কাগজের মালা। দলে একজন সাজে মহাদেবের সাজে। তার হাতে থাকে ত্রিশুল। খন্ড খন্ড দলে বিভক্ত হয়ে তলোয়ার উচিয়ে নাচতে থাকে। এলাকার প্রতিটি পাড়া থেকে নামে একটি করে দল। নাচতে নাচতে দলগুলো চলে যায় এলাকার শ্মশানে। সেখানে নেচে আবার বাড়ি ফিরে আসে। সারাদিন প্রতীকি যুদ্ধের পর। দিন শেষে মহাদেবের কাছে আত্মসমর্পন করার মধ্য দিয়ে শেষ হয় লালকাছ।


লালকাছ হচ্ছে মহাদেবের সঙ্গে মর্তের মানুষের যুদ্ধ। রোগমুক্তি কামনা করে চৈত্র মাসের শেষে শিবের পূজা করে মুন্সিগঞ্জের আব্দুল্লাহপুরের হিন্দুরা। চৈত্রসংক্রান্তির দিন মহাধুমধামের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ হয়। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি থানার আব্দুল্লাহপুর গ্রাম লালকাছের জন্য বিখ্যাত। শহরে কোথাও কোথাও এ অনুষ্ঠানের আয়োজন দেখা যায়।

চৈত্র সংক্রান্তির পাঁচদিন আগে থেকে শুরু হয়। স্থানীয়রা সংক্রান্তিকে স্ব-কান্দা বলেন। স্ব-কান্দার আগের দিন হয় লালকাছ। (তবে সাধুর বাড়িতে সংক্রান্তির আগের দিন করা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের তারিখের পার্থক্যের জন্য এটা হয়।)


সংক্রান্তির দিন সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত শিব আর পার্বতী পাড়া ঘুরে। দুপুরের পর থেকে শুরু হয় লালকাছের প্রস্তুতি। শেষ হয় সন্ধ্যায়। হাফপ্যান্ট পরে খালি গায়ে বসে যান এক একজন মেকাপম্যানের সামনে। সারা শরীরে সিদুর রং মেখে, মাথায় রঙিন কাগজের মালা, মুখে জবা ফুল। অবশেষে হাতে তলোয়ার নিয়ে সারি সারি বের হয়ে পড়েন মিছিলে। মিছিলের সম্মুখ ভাগে থাকেন ঠাকুর। একহাতে তার জারজ সন্তানের মাথার খুলি অন্য হাতে থাকে ধুপদানি। মন্ডলবাড়ির সন্যাস বাড়ি থেকে বের হয়ে শ্মশান ঘাটে গিয়ে ফের সন্যাসতলার মন্দিরে এসে শেষ হয় লালকাছ। সেখানে চলে জারজ সন্তানের খুলির রেস্ট নেয়ার কাজ। সে এক কাহিনী। সন্যাস ঠাকুর আর তার স্বীকৃত প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কেউ খুলি ধরলে হবে মহা অনাচার। আর সেই অনাচারের মূল্য চরম।

এক সময় এই গাছে ঝুলত পিঠে বড়শি গেথে চড়ক সন্যাসীরা। এখন আর চড়ক ঘুরানো হয় না। তবে শশ্মশানের পাশের পুকুর থেকে চড়কের গাছ তুলে পুজা দেয়া হয়। চড়ক গাছের পুজা শেষ করে সন্যাস তলার মাঠে পূজা হয়। পূজায় সাত রকমের ফল লাগে। ঘরের নারীরা আর সন্যাসী বরন করে নেয় দলকে। এর পরেই সন্যাস বাড়ীর পুকুরের চারদিকেই সানবাধানো ঘাট। ঘাটে ঘাটে বসে শরীর পরিষ্কার হওয়ার কাজ।

রাতে হয় শিব পূজা। এবং এই পুজার মধ্য দিয়ে শেষ হয় ঐ বছরের দোলকাছ আর লালকাছ।

প্রবীণ লালকাছের রূপকার অমৃত গোস্বামী। এক শ্লোকে সাতপুরুষের নাম বলে যেতে পারেন যারা নাকি লালকাছ করতেন। অমৃত গোস্বামীকে অনেকে সন্যাসী বলেও চেনেন। তিনি বলেন, শয়তান, বজ্জাত, পাপি, তাপিকে উদ্ধার করতে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর উদয়। দস্যু ধ্বংস করার জন্য মহাদেবের উদয় হয়। আর এটাই লালকাছ। আমি যে মাথার খুলিটা হাতে রাখি, ঐটা জাউরা সন্তানের, এটার শক্তি অনেক। কে সংগ্রহ করেছে জানি না, আগে এই মাথার খুলির সঙ্গে একটা সংখের মালা ছিল। মালাটা আর খুলিটা মদ খাইত।

লাল কাছের দিন উপোস করেন সাধু। তার লালকাছের পুরনো কাহিনীশোনালেন, বাবা গোপাল কৃষ্ণ গোস্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি একাই দোলকাছ আর লালকাজ করতেন। তিনি মহাদেব সেজে সকালে পাড়া বেড়াতেন। দুপুরে আবার তিনি নিজেই জারজ সন্তানের খুলি হাতে লালকাছের নেতৃত্ব দিতেন। একবার হয়েছে কি, লাল কাছের জন্য সাজে বসেছেন। বারোআনি সাজ হতেই তিনি আর বসে থাকতে পারছেন না। উঠে বেরিয়ে পড়লেন। আর তিনি দাবি করেন এই কাজটা তিনি করেন নাই, মহাদেব নিজে তাকে দিয়ে করিয়েছেন। অমৃত গোস্বামী বলেন, লালকাছ মিছিল বিভিন্ন পাড়া থেকে বের হয়, মিছিল এক সময় মহাসমুদ্র রূপ ধারণ করে, মিছিলে মহাদেব উদয় হন, আর্বিভূত হন তার পছন্দের ভক্তের ওপর। যার ওপর আর্বিভূত হন তিনি বুঝতে পারেন। তিনি জানান, তার ওপর হয়েছে কয়েকবার।

মৌখিক শুনে শুনে এই কাহিনি তৈরি করা হলো। লালকাছের উদ্ভব নিয়ে ইতিহাসে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। তবে অনেকে মনে করেন, একসময় নদীবেষ্টিত এই সন্যাস বাড়িতে ডাকাতির ভয় ছিল। বা আদিপত্যবাদীদের ভয়ে প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তিতে যে চড়ক পূজা হতো তাকে উপলক্ষ করে নিজেদের যুদ্ধ মোকাবেলায় সক্ষমতা জানান দেওয়াই ছিল এই লালকাছের উদ্দেশ্য। যাই হোক, শতশত বছরের ঐতিহ্যবাহী লালকাছ এখনো মানুষের মন দোলায়িত করে। ঐক্যবদ্ধ হতে সহায়তা করে সমাজের বন্ধন শক্ত করে। বেঁচে থাক লালকাছ। বেঁচে থাক বাংলার পালা-পার্বণ।

Комментарии

Информация по комментариям в разработке