Скачать или смотреть Baul Songs of Tagore & Azahar Fakir/ Amar Sonar Bangla & Ghore Jwalga/ Mansur Fakir & Runa Majumdar

মনসুরের গাওয়া গানটির কথা কমেন্টস অংশে প্রথমেই দেওয়া হয়েছে। গানটি শোনার আগে সেটি পাঠ করে নিলে গানটি বুঝতে সুবিধা হবে।

মনসুর ফকির (১৯৫২ - )

মনসুর ফকিরের পূর্বপুরুষরা আফগানিস্তান থেকে মালদহের গৌড়ে আসেন। কয়েক প্রজন্ম আগে মনসুরের পূর্বপুরুষরা বর্তমান নদীয়া জেলার তেহট্ট মহকুমার অন্তর্গত ও বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন গোড়ভাঙা গ্রামে আসেন। গৌড় ভেঙে এলেন বলে গ্রামের নাম গোড়ভাঙা। এটি কৃষ্ণনগর থেকে ষাট কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

মনসুরের পিতা আজাহার ফকির দুই বাংলার বাউল-ফকির পদকর্তাদের অন্যতম। অনুগামীদের দ্বারা তাঁর ‘পদ’ বহুচর্চিত। কিন্তু দুয়েকটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে অধিকাংশ পদকর্তাই শহরকেন্দ্রিক অ্যাকাডেমিক চর্চা ও গণমাধ্যমের খোঁজখবরের মধ্যে আসেননি।

মনসুর যে গানটি গেয়েছেন, সেটি তাঁর পিতার রচনা। আজাহার নিশ্চয়ই এই সুরেই গানটি গেয়েছিলেন। এই সুরের সঙ্গে গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে’ ও গগনের গান ভেঙে রবীন্দ্রনাথের ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির সুরের অদ্ভুত মিল। লালন-গগনের বিচরণক্ষেত্র ও গোড়ভাঙার ভৌগোলিক দূরত্ব বস্তুতঃ একদিনের পায়ে হাঁটা পথ।

এই গানটি করার সিদ্ধান্ত তিনি অকস্মাৎ নেন এবং আমাকে এক মুহূর্ত অবকাশ না দিয়ে গাইতে শুরু করেন। নির্দেশ দেন দুটি স্তবকের মধ্যে (ইন্টারলিউড) ‘আমার সোনার বাংলা’র প্রথম লাইনটি আমাকে গাইতে হবে। তাঁর নির্ভয় রূপের জন্য আমি ভীত হইনি।

প্রযুক্তি অবশ্য তাঁকে খাতির করেনি। মাইক্রোফোন, শব্দযন্ত্রী, আলাদা ট্র্যাক, আলো, ক্যামেরা - কিছুই প্রস্তুত ছিল না। রেকর্ডটির শব্দের খারাপ মান দেখলে তা বোঝা যায়। কিন্তু সংরক্ষণের দিক থেকে ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে এর গুরুত্ব অসীম। এছাড়া বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অবস্থায় সেখানে অবস্থিত তাঁর অনুগামী ভক্তদের জন্য তিনি একটি বার্তা দিতে চাইছিলেন।

মনসুরের সঙ্গে প্রথম আলাপ প্রায় তিন বছর পূর্বে (২৩/১/২২) বাংলাদেশ সীমান্তে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে গান গাইতে গিয়ে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আমার ছাত্র শ্রী আনন্দমোহন মণ্ডলের আহ্বানে এই অনুষ্ঠানে আমার গান শুনে তিনি বলেছিলেন ‘বড় শান্ত গান’।

মনসুর এখন শুধুমাত্র লোকধর্মের গবেষক ও শিক্ষকদেরই আকর্ষণের বিষয় নন, শিল্পী হিসাবে আক্ষরিকভাবে তাঁর খ্যাতি জগৎজোড়া।

তাঁকে এই কথা বলার সাহস সঞ্চয় করতে তিন বছর লাগল যে তিনি আমার দ্বারা গীত রবীন্দ্রনাথের বাউল ও কীর্তনাঙ্গের গানের সঙ্গে তাঁর উদ্ভাবিত ‘মনসুরি দোতারা’ বাজাবেন। এটি সঙ্গত করা নয়, সর্বোচ্চ স্তরের সাধক-সত্তার অধীনে থেকে কাজ করা। সেইজন্যই তাৎক্ষণিকভাবে করা ও তাঁর দ্বারা গীত ভিডিও রেকর্ড প্রথমে প্রকাশ করা হল তাঁকে সম্মান জানানো প্রয়োজন বলে।

গত ১১/৮/২৪ তারিখে গোড়ভাঙায় তাঁর আশ্রমে এই ইচ্ছার কথা নিবেদন করলে তিনি আমার পরীক্ষা নিলেন। মনে হয় অত্যন্ত খুশি হলেন। তাঁর পিতার মাজারটিই তাঁর আশ্রম। তিনি থাকেন তাঁর পিতার মাজারে এবং রাতে বিশ্রাম করেন সেখানেই দরমার বেড়া ও প্লাস্টিকে মোড়া একটি কুটিরে। বাড়ি যান না। পিতার সমাধির পাদদেশে আমাকে বসালেন এবং আমাকে ‘সোনার বাংলা’ কল্পনা করে নিয়ে একটি গভীর তত্ত্বের গান গাইলেন। বারবার ‘আমার সোনার বাংলা’ – এই মুখটিতে ফিরে আসছিলেন।

এর পরেই দ্বিতীয় রেকর্ড হিসাবে আমার দ্বারা এককভাবে গীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি প্রকাশিত হবে। এর সঙ্গে দোতারা বাজিয়েছেন মনসুর এবং একতারা ও ডুবকি বাজিয়েছেন যথাক্রমে পিয়াস ও শিশির ফকির।

গত ১৫/৯/২৪ তারিখে আমাদের কল্যাণীর বাড়ির স্টুডিওতে দুই পুত্রকে ( পিয়াস ও শিশির ফকির) নিয়ে এলেন এবং সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত রেকর্ড করলেন। এই ক্লান্তিহীন বাহাত্তর বছরের ‘শিশু’ প্রথমে আমার নটি গানের অডিও ও পরে ভিডিও রেকর্ডের সঙ্গে বাজালেন। নিজে পাঁচটি গান গাইলেন এবং দোতারা বাজালেন সতেরো মিনিট। শুধুমাত্র দ্বিপ্রাহরিক আহারের জন্য পনেরো মিনিটের অবকাশ!

তাঁর পায়ের কাছে উপহার হিসাবে একটি শাল রাখলে সঙ্গে সঙ্গে গায়ে দিয়ে ফেললেন, শীতের আগে যদি ‘মরে’ যান, এই যুক্তিতে!

আমরা তাঁর উপর একটি স্বল্প ও একটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র তৈরি করার পরিকল্পনা করেছি। তাঁর জানা গানের কোনো মহাফেজখানা নেই। এই কাজটি না করলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও বঙ্গসংস্কৃতির ক্ষতি।

ফকিরি দর্শন এখানে আলোচ্য নয়। নগর-বাজারের নিয়ম মেনে একটি জ্যোতির্বলয়ের গণ্ডীর মধ্যে তাঁর শিল্পীসত্ত্বা আটকে নেই। এটি তাঁর সাধনার ফল। শান্তিদেব ঘোষ, মোহন সিং, কালিকাপ্রসাদ অথবা মাধুকরীরত বাউলের মধ্যে কোনো তফাত করতে তিনি জানেন না।

আমার গানের অনেক ‘টেক’ নিতে হচ্ছিল, তাঁর গানের একটিই ‘টেক’। তাও তখনই ঠিক করছিলেন কী গাইবেন। এই বহতা নদীর স্রোতে অবগাহন না করলে সংস্কৃতিচর্চায় আমাদের অস্বাছন্দ্য, মানসিক দীনতা, পারস্পরিক দুরত্ব এবং অসূয়া যাবে না।

যে বিদগ্ধ গবেষক ও অন্বেষক মনসুরের প্রিয়ভাজন, তিনি হলেন শ্রদ্ধেয় শ্রী শক্তিনাথ ঝা।

আজাহারের সৃষ্ট বহু পদ তাঁর শিষ্যবর্গরা লিখে রেখেছিলেন। সেই মূল পাণ্ডুলিপি মনসুরের পুত্রদের কাছে আছে। কিন্তু এই স্বর্ণভাণ্ডার নিয়ে কোনো কাজ হয়নি।

তিনি ‘ডি’ স্কেলে গান গান। লয় ও তালের হেরফেরের প্রশ্নই আসে না।

তাঁর পুত্ররা আমাকে ‘পিসি’ বলছিলেন, কারণ মনসুর আমার মধ্যে তাঁর প্রয়াতা সহোদরাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন। তিনি বলেছেন – আবার আসবেন।

No infringement of copyright is intended.