ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্য ও ডায়াবেটিস রোগীর সঠিক জীবন যাপন এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের সহজ উপায়ঃ
সারাবিশ্বে ডায়াবেটিস এখন অসংক্রামক মহামারী রোগ। কয়েক দশক আগেও এটি খুব স্বল্প পরিচিত রোগ ছিল। বর্তমানে শুধু উন্নত দেশগুলোতেও নয়, উন্নয়নশীল এবং অনুন্নত বিশ্বেও এটি বিস্তার লাভ করেছে।
অতিরিক্ত ওজন, কায়িক শ্রমের অভাব, উচ্চ শর্করা এবং কম আঁশযুক্ত খাদ্যাভাসে বেড়ে যাচ্ছে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভাসের জন্য বড়দের সাথে সাথে ছোট শিশুদের মধ্যেও এ রোগের আক্রান্তের হার বেড়ে যেতে দেখা যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের জন্য তাই আমাদের ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় তিনটি ‘ ডি ’ অনুসরন করতে হবে।
প্রথম ‘ডি’– ডায়েট বা খাদ্য নিয়ন্ত্রন।
দ্বিতীয় ‘ডি’ – ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন যাপন।
তৃতীয় ‘ডি’- ড্রাগ বা ঔষধ (প্রথম দুইটি ডি মেনে চললে খুব অল্প সংখ্যক রোগীরাই এটির প্রয়োজন হবে।)
ডায়েট ও ডিসিপ্লিন এর মাধ্যমেই ৬০ থেকে ৮০ ভাগ ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। আবার এই দুটি বাদ দিয়ে শুধু ঔষধের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের নিয়ন্ত্রন কোনভাবেই সম্ভব নয়।
ডায়াবেটিক ডায়েট কি?
এটি হচ্ছে একটি স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকা, যা আপনার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রন করতে সহায়তা করবে।
এটি হতে হয়ঃ
- পরিমিত পরিমানে
- নিয়মিত সময়ের ব্যাবধানে
- প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ
- কম চর্বি কম ক্যালরিযুক্ত
- রুচি সহায়ক ও
- সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রক
আপনার যদি ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিস থেকে থাকে স্বাস্থ্যকর খাওয়ার পরিকল্পনা তৈরি করতে একজন ডায়াবেটোলজিসট এর পরামর্শ নেবেন।
আপনার স্বাস্থ্যলক্ষ্য, রুচি এবং জীবনযাত্রার উপর ভিত্তি করে খাদ্যতালিকাটি তৈরি করা হবে।
এক্ষেত্রে ডেইলি ক্যালরি ইনটেক এর রিকমেন্ডেশন হচ্ছে-
১। কার্বোহাইড্রেট - ৫০ থেকে ৬০ ভাগ
২। ফ্যাট - ৩০ ভাগ
৩। প্রোটিন - ১০ থেকে ২০ ভাগ
১। কার্বোহাইড্রেট/শর্করা –
• সহজ শর্করাঃ যা সহজেই হজম হয়ে যায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয় যেমন চিনি, মিস্টি, মিস্টান্ন, মিষ্টি পানীয়, কেক, চকলেট, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি এগুলো পারতপক্ষে খাবেন না।
• জটিল শর্করাঃ চাল, আটা, আলু এগুলো শর্করার মাত্রা বাড়াতে সময় নেয়। এগুলো খেতে হবে তবে পরিমাণমত।
২। ফ্যাট-
• ক্যালরিবহুল ও চর্বিযুক্ত খাবার বিশেষত, স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন ঘি, মাখন, ডালডা ইত্যাদি কম খাওয়ার পরিবর্তে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন উদ্ভিজ্জ্ব তেল অর্থাৎ ক্যানোলা তেল, সয়াবিন বা সুর্যমুখী তেল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিৎ।
• ট্রান্সফ্যাট- কনফেকশনারির খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক্স খাবারের তালিকা থেকে একেবারেই বাদ দিয়ে ফেলুন।
• ক্ষতিকারক চর্বি – ডিমের কুসুম, মাংসের চর্বি, কলিজা ও মগজ খাবেন না।
৩। প্রোটিন-
• প্রানিজঃ মাছ, মাংশ, ডিমের সাদা অংশ, দুধ, পনির, ছানা ইত্যাদি।
• উদ্ভিজঃ ডাল, ছোলা, মটর, মটরশুঁটি, বাদাম, নারিকেল, শিমবিচি ইত্যাদি।
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারঃ
• ডাল- বিশেষত খোসাসহ ডাল, শিমবিচি, মটরশুঁটি
• শাক- বিশেষত পুঁইশাক
• সবজি- খোসাসহ সবজি যেমন ঢেঁড়স, বরবটি, শিম, সজনে, ব্রকলি, বিন
• ফল- আমলকী, পেয়ারা, আপেল, নাশপাতি
ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে ডায়াটারি ফাইবার থাকে যা দেহ হজম করতে বা শোষণ করতে পারেনা। এটি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রনে সহায়তা করে।
কেমন হবে ডায়াবেটিস রোগীর খাবারের প্লেট?
আপনার প্লেটের অর্ধেক অংশটি শাকসবজি ও সালাদ দ্বারা পুর্ন করান। ১/৪ ভাগ আমিষ এবং ১/৪ ভাগ শর্করা দ্বারা ভরতে হবে।
৫ মিল প্যাটার্নে খাবার গ্রহন করবেন।
- প্রধান মিল ৩টি
-স্ন্যাকস ২টি
( মিড মর্নিং, আফটারনুন)
নকচারনাল হাইপোগ্লাইসেমিয়া এভোয়েড করার জন্য-বেড টাইম স্ন্যাকস
#খাবারের পরিমান ভাগ-
• ব্রেকফাস্ট ২০%
• লাঞ্চ ৩৫%
• ডিনার ৩০%
• স্ন্যাকস ১৫%
স্বাস্থ্যকর রান্নার পদ্ধতিঃ
- সাধারন চিনির পরিবর্তে কৃত্রিম চিনি ব্যাবহার করুন।
- ননস্টিক প্যান ব্যাবহার করুন।
- তরকারিতে মাছ মাংসের চেয়ে শাক সবজির পরিমাণ বেশি রাখুন।
- পাতলা ও কম চর্বিযুক্ত মাংস বেছে নিন।
- তেলে ভাজা খাবার, ফাস্টফুড বর্জন করুন।
- রান্নায় কম লবন ব্যাবহার করুন।
- পাতে বাড়তি লবন নেবেন না।
- ফ্রাই বা ডুবো তেলে ভাজার পরিবর্তে আগুনে গ্রিল, রোস্ট, বেকিং বা পানি দিয়ে সিদ্ধ বা ভাপে সিদ্ধ খাবার খান।
খাবার সময়ঃ
- একসাথে প্রচুর পরিমাণ খাবেন না। এতে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।
- কোন বেলায় খাবার বাদ দেওয়া ঠিক নয়। কারন এতে আপনি এমন ক্ষুদার্থ হবেন যে পরবর্তী আহারের সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
- এছাড়া দুইবার খাওয়ার মধ্যে সময় পার্থক্য বেড়ে গেলে শরীরে বিপাকীয় প্রক্রিয়া কমে আসে। তাই নির্ধারিত সময়ে খাবার খান।
- বাইরে কোন অনুষ্ঠানে খেতে যাওয়ার আগে সম্ভব হলে আগে ঘর থেকে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়ে যাবেন।
- হোটেল বা রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে অল্প পরিমাণ অর্ডার দিবেন।
- ছোট বা মাঝারি ধরনের প্লেটে খাবার নিন। প্রধান খাবার অর্ডার দেয়ার আগে এপিটাইজার বা ক্ষুধানিবারক হিসেবে পাতলা স্যুপ বা সালাদ নিন।
- অতিরিক্ত খাবার প্লেট থেকে সরিয়ে ফেলুন।
- খাবার ধীরে ধীরে এবং অনেকসময় ধরে চিবিয়ে খান।
মনে রাখবেন, অনিরাময়যোগ্য রোগ হলেও ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রনে রেখেই সুস্থ স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনযাপন করা যায়। তাই ডায়াবেটিসের মহামারী রোধে পরিমিত খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম করে সুস্থ, কর্মোদ্যম ও ¬প্রানবন্ত জীবন গড়ে তুলুন।
Dr.Mafruha Nusrat Khan
Diabetologist and Diabetic foot surgeon
পরামর্শ বা চিকিৎসার জন্য যোগাযোগ করুন
মোবাইল নংঃ +880 1714028300
ইমেইলঃ [email protected]
ঠিকানাঃ কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, গ্রাউন্ড ফ্লোর, কলেজ গেট (ওভার ব্রিজ সংলগ্ন) মোহাম্মদপুর, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের বিপরীতে।
ঢাকা, বাংলাদেশ।
Social Media Links:
Facebook Page: / diabeticfoot. .
Facebook Group: / 47665. .
#diabeticdiet #diabetesfoodroutine #diabetes
Информация по комментариям в разработке