জিডি করেই দ্বায় সেরেছে বন বিভাগ ‼️
আইনি সমস্যা থেকে বেঁচে যাওয়ায় গরু জবাই‼️
১৭ই মে উত্তরা কোটবাড়ি রেলগেটে চট্রলা এক্সপ্রেসের সাথে ধাক্কা লেগে নির্মম মৃত্যুর শিকার হওয়া হাতিটির মৃত্যুর পঞ্চম দিনে ২২শে মে দুপুরে রেজিষ্ট্রেশন বিহীন হাতির মৃত্যুর জন্য হাতির মালিক নোনা মিয়ার বিরুদ্ধে বন বিভাগ কোন পদক্ষেপ গ্রহন না করে নামমাত্র জিডি করে দ্বায় সারাতে, বড় ধরনের আপদ থেকে বেঁচে যাওয়ায় বাড়িতে একটি গরু জবাই করে গ্রামের মানুষকে খাওয়ানো হয়েছে। যদিও ক্রয়সূত্রে হাতিটির মালিক ছিল নোনা মিয়া এবং ঘটনাস্থলে থাকা অপর হাতিটির মালিক ছিল ময়ূর মিয়ার। ঘটনার শিকার হাতি দুটি আমরা মা ও সন্তানের সম্পর্ক মনে হলেও তারা দুজনেই ছিল ভিন্ন পালের।
নোনা মিয়া ও ময়ূর মিয়া উভয়ের পাশাপাশি বাড়ি, তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই এবং দুজনেই পেশাদার হাতি ব্যবসায়ী। যাদের গ্রাম: কাঁঠালকান্দি, ইউনিয়ন : ইসলামপুর, উপজেলা কমলগঞ্জ, জেলা: মৌলভীবাজার।
ঘটনার সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী রেল গেটের গেইটম্যান মাসুদের ভাষ্য মতে ১৭ মে উত্তরা কোটবাড়ি রেলগেটের কাছাকাছি আমতলার গাছের ছায়ায় দুপুর বারটার সময় হাতি দুটিকে নিয়ে আসে মাহুত, রেল বিটের সাথে বেঁধে তাদের কলাগাছ খেতে দেয় তারা! দুপুর ১টা ৩৫ মিনিটে ট্রেন আসতে দেখে তাদের রেললাইন সরানোর চেষ্টা করে মাহুত কিন্তু ততক্ষণে ট্রেনের আঘাতে ছিটকে পড়ে বড় হাতিটি আর ছোট হাতি টির শরীরের শেকল ট্রেনের ইঞ্জিনের সাথে আটকে পড়ে, এতেই ট্রেন হাতিটিকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় প্রায় ৭০০ মিটার‼️
ট্রেনের চালক রেললাইনে হাতিগুলো দেখে অবাক হয়ে হুইসেল দেয়, তিনি ট্রেন থামানোর শত চেষ্টা করে আর এদিকে মাহুত রেল বিট থেকে হাতিদের সরানোর শত চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয় ‼️
হাতিটির একটি পা প্রায় ছিড়তে ছিড়তে কোন রকম আটকে ছিল দেহের সাথে ! পা সহ হাতির দেহের একটি অংশ ট্রেনের সাথে আটকে পড়ায় মুমূর্ষু হাতিটি বাঁচার আকুতি নিয়ে মানুষের সাহায্য কামনা করছিল‼️
অপর আহত হাতিটি তাকে অনেক চেষ্টা করে রেল লাইন থেকে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে মাহুত সুকৌশলে অপর হাতিটি নিয়ে সটকে পড়ে, অনেক বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বাট হাতি উত্তেজিত হলে সবাই পথ ছেড়ে দেয় ‼️
প্রায় ৩০ মিনিট সে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে সবার চোখের সামনে তার প্রান গেল, তখন সবাই ছিল নিরব দর্শক, কারন এত বড় প্রাণীকে বাঁচানোর কোন ধারনা সম্পন্ন মানুষ সেখানে ছিলনা, আর তাই ভেকুর সাহায্যে দেহটা রাস্তার অদূরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিশ মিনিট চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দাঁড়িয়ে ছিল, চালক সহ সকল যাত্রী ছিল মর্মাহত।
দুপুর দুইটায় গেইট ম্যান মাসুদের স্থানে ডিউটিতে আসে উৎপল, হাজার হাজার মানুষ অসহায় হাতিটিকে দেখতে এলেও রাত ১০টায় যখন তার শিফট চেঞ্জ তখন পর্যন্ত বন বিভাগের কাউকে সে দেখেনি, নিথর দেহ পড়ে আছে রাস্তার পাশে ‼️
রাত দশটা, তার স্থলে ডিউটি আসে আব্দুস সামাদ, সে জানায় রাত সাড়ে এগারটা পর্যন্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর তথা বন বিভাগের কোন ব্যাক্তি ঘটনাস্থলে যায়নি! অর্থাৎ প্রায় ১০ ঘন্টা নিথর বেওয়ারিশ হাতির দেহ পড়ে থাকলেও কেউ একবার দেখতেও আসেনি‼️
রাত সাড়ে এগারটায় বন বিভাগের দুজন রেঞ্জ কর্মকর্তা ও বিট কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেন, তাদের উত্তরা কোটবাড়ি রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা রাত সাড়ে বারো টায় পেপার্স ওয়ার্ক কমপ্লিট করে। রাত দেড়টায় বন বিভাগ ডাম্প ট্রাক দিয়ে হাতিটি নিয়ে যায় গাজীপুরের সালনা।
সারারাত লুকোচুরি হাতির মৃতদেহ কোথায় তা নিয়ে, বাট আমরাও নাছোড়বান্দা, অবশেষে ভোর সাতটা আমরাও পৌঁছে গেলাম হাতির কাছাকাছি, কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে ঢাকা থেকে নির্দেশ আসল আমরা যেন হাতির কাছে যেতে না পারি !
আমাদের নিয়ে যাওয়া হল অন্য এক স্থানে, সে কি জামাই আদর, বুঝতে পারছিলাম ষড়যন্ত্র হচ্ছে আমাদের নিয়ে, পরে ফোনে অনেক বাকযুদ্ধ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে‼
নির্ঘুম রাত, বৃষ্টিতে তিনবার ভিজে শুকিয়েছে আমাদের দেহের পোষাক গুলো, হাতিটির বিদায়ের বেলায় পাশে থাকবই, অবশেষে সকাল ১০টায় আমাদের অনুমতি দেওয়া হল শর্ত সাপেক্ষে কোন ছবি তোলা বা ভিডিও করা যাবে না ⁉️
পোস্ট মর্টেমের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তার কাছেই ছিলাম আমরা, তাকে কবর দিতে আনা হয়েছে ১৬ জন লেবার, তারা কবর কুড়ার সময়ে তার পাশেই আমরা ছিলাম!
সুযোগ থাকলেও পোস্ট মর্টেমের আগে সরে এলাম, কারন আমরা মানুষ, আহ্ , তার মাথার মগজ সহ পানি হয়ে গেয়েছে বলে জানাল পোষ্ট মর্টেম করতে আশা ভেটেরিনারি সার্জন ‼
এ বিষয়টি থেকে বেরিয়ে আসতে, সুস্থ ও স্বাভাবিক হতে আমার দশটা দিন লেগেছে ! হাজার হাজার কথা আছে যা লিখতে পারছি না, বলতে পারছিনা, কত জনের কত অভিযোগ মাথায়ও ডুকেনি, কারন আমরা মানুষ ....
মূলত মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাতির মালিক থেকে উপভাড়া নিয়ে পার্বত্য অঞ্চলে বড় বড় কাঠের লগ টানতে, সার্কাস ও সিনেমার শুটিং এর জন্য হাতি ভাড়া দেওয়া নোনা মিয়া ও ময়ূর মিয়ার ব্যাবসা। হাতি দিয়ে কাজ কম হলেই ঢাকা সহ সারাদেশে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়ে তারা আর তাতে নিশ্চয় যে কোন সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সিন্ডিকেট সদস্যরা। অন্যথায় ঢাকার রাজপথে হাতি নিয়ে চাঁদাবাজি কখনো সম্ভব নয় !
#বন্যপ্রাণীর_বানিজ্যিক_ব্যবহার_বন্ধ_করুন
হাতির প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে এই হাতিগুলো নিয়ে তারা একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে। পরিকল্পিত ভাবে উজাড় করা হয় সংরক্ষিত বনের শতবর্ষী মাদার ট্রী। আর এতে প্রতিটি হাতির আসল মালিকরা তাদের হাতি ব্যবহারের এর বিনিময়ে এককালীন বাৎসরিক ও মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে।
তাই হাতিকে ঘিরে সারাদেশে গড়ে উটেছে একটি সঙ্ঘবদ্ধ চক্র, যে চক্রের সদস্যদের শাস্তির আওতায় আনার মাধ্যমে সকল হাতিকে বনে ফিরে যাবার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। অবশ্যই বন্দীত্ব জীবনের অবসান প্রত্যেকের কাম্য, তারা অনেক বুদ্ধিমান এবং আধ্যাত্বিক ক্ষমতার অধিকারী, মুক্তি পেলে প্রাকৃতিক পরিবেশে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবে। তাই তাদের বাঁচাতে প্রয়োজন মানবিক মহৎ দৃষ্টিভঙ্গির।
Информация по комментариям в разработке