অস্টিওআথ্রাইটিস ( হাটু ক্ষয় জনিত রোগ) Osteoarthritis

১ । আমার হাঁটু ব্যথা কেন হয়েছে?

এই রোগের নাম অস্টিওআথ্রাইটিস। এই রোগের কারণে হাঁটুর তরুণাস্থির সহ অন্যান্য স্ট্রাকচার গুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেই কারনে আপনার হাঁটুর ব্যথা হচ্ছে।

২ । অস্টিওআথ্রাইটিস কি?

সোজা ভাষায় বলা যেতে পারে এটি তরুণাস্থির ক্ষয়রোগ। আপনি একটি মুরগির হাড় পর্যবেক্ষণ করলে দেখবেন, এর মাথার উপরে একটি সাদা অংশ আছে যেটি খুব নরম এবং আমরা সচরাচর এটি খাই। এই নরম হাড়কে তরুণাস্থি বলে। এই তরুণাস্থি অনেক পুরু থাকে বা মোটা থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে এটি যখন ক্ষয় হয় তখন দেখা যায় তরুণাস্থির সহ জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির বা গিঁটের অন্যান্য জায়গায়ও সমস্যা হয়েছে। এর সম্মিলিত প্রভাবেই হাঁটু ফুলে যায় এবং হাঁটুর বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা হয়। এভাবে এ রোগটি হয়।

৩ । অস্টিওআথ্রাইটিস রোগের কারণ কি?

তরুণাস্থি ক্ষয় যাওয়া এই রোগের প্রধান কারণ। প্রশ্নটিই এরকম হতে পারে যে তরুণাস্থি কেন ক্ষয় হয়?
প্রথমত বলা যায় বয়স জনিত ক্ষয়। বয়স 50 এর উপরে হতে থাকলে এই ধরনের ক্ষয় শুরু হয়।

স্থূলতা বা মোটা হয়ে যাওয়া।

বংশগতি- যাদের বংশে আছে তাদের এই ক্ষয় অনেক তাড়াতাড়ি শুরু হয়।

আগেকার খেলাধুলা জনিত আঘাত বা পড়ে গিয়ে হাঁটুতে আঘাত পেয়ে থাকলেও এ ধরনের ক্ষয় হতে পারে। যত বয়স বাড়বে ততোই পুরাতন আঘাতজনিত কারণে এই ক্ষয়ের আকার বৃদ্ধি পাবে।

কিছু বাতজনিত রোগ আছে যেগুলোর কারণে সাইনোভিয়াল মেমব্রেন বলে অস্থিসন্ধির চারদিকে যে নরম পাতলা আবরণ থাকে সেটির মধ্যে প্রদাহ হয় যার ফলে এটি ফুলে যায় এবং অস্থিসন্ধি কে ক্ষয় করে দেয়। এই রোগগুলো হলো রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস , রিঅ্যাক্টিভ আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি।

আরো অন্য অন্য কিছু কারণ থাকতে পারে যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ও তরুণাস্থির ক্রয় করতে পারে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিভিন্ন ধরনের ব্যথার ওষুধ।

৪ । এই রোগের লক্ষণ কি?

প্রথম লক্ষণ হলো হাঁটু ব্যথা। তাছাড়া হাঁটু ফুলে যায়। হাটু পরিপূর্ণভাবে ভাঁজ করা যায় না। নামাজ পড়তে তথা প্রার্থনা করতে কষ্ট হয়। নিচু করে বসতে কষ্ট হয়। ধীরে ধীরে হাঁটু বেঁকে যেতে পারে।

৫ । এই রোগের জন্য কি কি পরীক্ষা করতে হয়?

অনেক ক্ষেত্রেই হাঁটুর এক্স-রে করাতে হয়। তাছাড়া কিছু কিছু করতে রক্ত পরীক্ষা লাগে।

৬ । এই রোগের চিকিৎসা কি?

এই রোগের প্রধান চিকিৎসা হলো ওজন কমানো।
ওজন কিভাবে কমাবেন এই সম্বন্ধে আমাদের অন্য একটি প্রকাশনা বা ভিডিও আছে।

কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ব্যায়াম আছে যেগুলো করতে হবে।

ডাক্তার সাহেব আপনাকে অনেকগুলো নিয়ম-কানুন মেনে চলতে বলবেন সেগুলো মেনে চলবেন। তারমধ্যে দুটো প্রণিধানযোগ্য। যখন হাটু ব্যাথা বেশি থাকবে তখন হাঁটু ভাঁজ করে বসবেন না। কখন নামাজ পড়ার সময় চেয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। আর ইংলিশ কমোড বা হাই কমোড ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডাক্তার সাহেব আপনাকে প্রয়োজনবোধে পায়ের জুতোর মধ্যে কিছু মডিফিকেশন করতে পারেন।

হাঁটুর বিভিন্ন রকমের সাপোর্ট আছে। আপনার জন্য যেটি প্রয়োজন ছিল সেটি ডাক্তারের পরামর্শ মতো ব্যবহার করবেন।

হাঁটুর সাপোর্টই সব সময়ের প্রয়োজন নেই। এখন শুয়ে থাকবেন তখন এটা খুলে রাখবেন। হাটা চলার সময় এটি পরতে হবে।

তরুণাস্থির ক্ষয় রোধ করে এই ধরনের মুখে খাওয়ার ওষুধ গুলো খুব বেশি কার্যকর হয় না। তারপরও এই ধরনের বেশ কিছু ওষুধ আছে ডাক্তারের পরামর্শে সেগুলো সেবন করতে হবে।

ব্যথার ঔষধ আছে। বেশি ব্যথা হবে তখন ব্যথার ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ব্যথার ওষুধ খাবেন। কিছু ধরনের ব্যথার ওষুধ তরুণাস্থি কে ক্ষয় করে সেগুলো খাবেন না। কিছু ব্যথার ঔষধ আবার তরুণাস্থি কে উদ্দীপ্ত করতে পারে। সেগুলো খাওয়া যেতে পারে। ব্যথার ঔষধ সংক্রান্ত ব্যাপার গুলো আমাদের অন্য একটি প্রকাশনায় বিস্তারিত আছে। এখান থেকে দেখে নিতে হবে।

তাছাড়া কিছু ইনজেকশন আছে সেগুলো দেওয়া যেতে পারে।