Debabrata Biswas LIVE in the 1970s – Pt 29 – রবীন্দ্রনাথের ‘জাতীয় সংগীত’ চতুষ্টয়

Описание к видео Debabrata Biswas LIVE in the 1970s – Pt 29 – রবীন্দ্রনাথের ‘জাতীয় সংগীত’ চতুষ্টয়

‘সত্তরের দশকে জর্জদা’-র আজ ঊনত্রিংশতিতম পর্ব। আজ ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবস। এই উপলক্ষে এই পর্বে রইল রবি ঠাকুর রচিত জাতীয় সংগীত পর্যায়ের চারটি গান। আপনারা যারা রবীন্দ্রনাথের গীতবিতান প্রায়শই উল্টেপাল্টে দেখেন, তারা অবশ্যই লক্ষ্য করেছেন যে রবীন্দ্রনাথ তার জাতীয়তাবাদী গান দুটি ভাগে বিভক্ত করে গীতবিতানে সংকলিত করেছেন। প্রথম ভাগটি ‘স্বদেশ’ পর্যায় - যেখানে সংকলিত গানের সংখ্যা ৪৬; এবং দ্বিতীয়টি ‘জাতীয় সংগীত’ পর্যায় - যেখানে গানের সংখ্যা ১৬। এই দ্বিতীয় অংশের ১৬ টি গানের মধ্য থেকে আজ চারটি গান আপনারা শুনবেন। লক্ষণীয় এই যে রবীন্দ্রনাথ যখন এই পর্যায়ের গানগুলি রচনা করছেন তখন তার বয়স যথেষ্টই কম। এখনকার ভাষায় রবীন্দ্রনাথ তখন teenager. প্রথম গান ‘দেশে দেশে ভ্রমি’ রচনাকালে কবির বয়স ২০। পরের গান ‘তোমারি তরে মা’ কবির ১৬ বছর বয়সের রচনা। তারপরের গান ‘ঢাকো রে মুখ, চন্দ্রমা’-র সময় কবির বয়স ১৭ এবং শেষ গান ‘একসূত্রে বাঁধিয়াছি’ রচনাকালে রবীন্দ্রনাথের বয়স ১৮। ভাবতে অবাক লাগে এই বয়সে রবীন্দ্রনাথ কি করে এইসব গান রচনা করেছিলেন। এই গানগুলির মধ্যে দুটি গান নিয়ে আমি একটু বাড়তি তথ্য দেবো আপনাদের। দ্বিতীয় গান, ‘তোমারি তরে মা’ গানটি সম্পর্কে জানা যাচ্ছে ১২৮৪ বঙ্গাব্দে আশ্বিন সংখ্যা ‘ভারতী’ পত্রিকায় যখন গানটি প্রথম প্রকাশিত হয় তখন গানটির নাম ছিল ‘উৎসর্গগীতি’। জানা যায় স্বামী বিবেকানন্দ সম্পাদিত ‘সংগীত কল্পতরু’ গ্রন্থের ‘জাতীয় সংগীত’ বিভাগে এই গানটি সংকলিত হয়েছিল। গবেষক শংকরীপ্রসাদ বসু রচিত প্রবন্ধে পাচ্ছি এই গানটি স্বামী বিবেকানন্দ গীত একটি রবীন্দ্রসংগীত। আবার এই গানটির উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে স্বর্ণকুমারী দেবী রচিত ‘বিচিত্রা’ উপন্যাসেও সামান্য পরিবর্তিত রূপে। চতুর্থ গান, ‘এক সূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্রটি মন’ নিয়ে কতিপয় রবীন্দ্র গবেষক সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এটি রবীন্দ্রনাথের রচনা নয়। কারণ দর্শানো হয়েছে দুটি। প্রথমটি এই যে গানটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পুরুবিক্রম’ নাটকের অন্তর্গত, অতএব এর রচয়িতা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরই। এর স্বপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে জনৈক রবীন্দ্র গবেষক সন্দেহ প্রকাশ করেন যে রবীন্দ্রনাথ তখন নিতান্তই বালক সুতরাং তিনি এটি রচনা করতে পারেন না। উক্ত গবেষক হয়তো ভুলে যান রবীন্দ্রনাথ ১৬ বছর বয়স থেকে কি কি গান রচনা করেছেন ! আশ্রমিক ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় তার স্মৃতিচারণে পরিষ্কার জানিয়েছেন, “গানটি যে রবীন্দ্রনাথেরই রচনা ইহা আমরা কবির নিজের মুখেই শুনিয়াছি।” রবীন্দ্র স্নেহধন্য শান্তিদেব ঘোষ দেশ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধে পরিষ্কার জানিয়েছেন যে গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের‌ই রচনা। প্রখ্যাত রবীন্দ্র গবেষক প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ও এর স্বপক্ষেই মত দিয়েছেন। তিনি আরো জানাচ্ছেন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন পর্বে ‘বন্দে মাতরম্’ ধুয়াটি অতিরিক্ত যুক্ত করা হয় গানটির সঙ্গে।

এবার আসি জর্জদার গল্পে।

আপনারা সকলেই জানেন দেবব্রত বিশ্বাস চাকুরী করতেন হিন্দুস্তান ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। এই কোম্পানির চেয়ারম্যান ছিলেন নলিনী সরকার, যিনি পরবর্তীকালে মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের ক্যাবিনেটে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থ মন্ত্রী হয়েছিলেন। এই নলিনী সরকারের সঙ্গে দূর সম্পর্কের আত্মীয়তাও ছিল দেবব্রত বিশ্বাসের। বলা বাহুল্য নলিনী বাবু ছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস পার্টির নেতৃস্থানীয়। একদা এই নলিনী সরকারের বাড়িতে শ্রীমতি সরোজিনী নাইডু আসবেন স্থির হল। নলিনী বাবু দেবব্রত বিশ্বাস কে তার দলবল নিয়ে আসতে বললেন গান গাইবার জন্য। দেবব্রত বিশ্বাস, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং অন্যান্যরা গেলেন সেই উপলক্ষে নলিনী সরকারের বাড়িতে। এর পরের ঘটনা হেমন্ত বাবুর জবানীতেই শোনাই -
"একদিনের কথা মনে পড়ে। সরোজিনী নাইডু এসেছেন নলিনী সরকারের বাড়িতে। গান গাইবার জন্য আমাদের ডাক পড়েছে। আমরা তখন হারীনদা, মানে হারীন চট্টোপাধ্যায়ের গানগুলো খুব গাই। আমাদের সাথে জর্জদাও আছেন। গান হচ্ছে, 'অব নভমে পতাকা নাচত হ্যায়' - স্বদেশী গান। তখনো স্বাধীনতা আসেনি। তা কেউ গান আর শোনে না - সবাই গোলমাল করে; গোলমালও চলছে, আর আমরাও গেয়ে যাচ্ছি। ওই বিয়ে বাড়ির গানের মত আর কি, সবাই খেয়ে যাচ্ছে আর গানও হয়ে যাচ্ছে। আমার এখনো মনে আছে, হঠাৎ সেই জোরালো গলা, সেই দুর্দান্ত বেস, উনি চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘অব শুয়ার কা বাচ্চা নাচত হ্যায়’ যাতা করে গান শেষ করে বললেন ‘চলো আর গাইতে হবে না’। ”

হেমন্ত বাবু এই অবধি বলেছেন, কিন্তু এই ঘটনা এইখানেই শেষ নয়। এই ঘটনার পরবর্তী অংশ আমি জেনেছি শ্রী অধীপ চৌধুরী মহাশয়ের মুখে, যার সংগ্রহ থেকে আজ আপনারা এই চারটি গান শুনছেন। এর ঘটনার পরবর্তী অংশ জর্জদা জানিয়েছিলেন অধীপ বাবুর বাবা শ্রী নবেন্দু চৌধুরী মহাশয় কে।

পরদিন জর্জদা যথারীতি অফিসে এসেছেন। করিডোরে দেখা হয়ে গেল স্বয়ং নলিনী সরকারের সঙ্গে। ক্রুদ্ধ নলিনী বাবু জর্জদাকে বললেন, "তুমি আমারে কাল অপমান করসো।" দেবব্রত বিশ্বাস এক ধাপ গলা তুলে বললেন, "আপনারে তো অপমান করি নাই। আপনারা তো আমার সংগীতরে অপমান করসেন। আমরা গান করতাসি, আর আপনারা পান, ভোজন, হৈচৈ এইসবে মত্ত।" নলিনী বাবু বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন। তিনি ভালোই জানতেন দেবব্রত বিশ্বাস এমপ্লয়ী ইউনিয়নের নেতৃস্থানীয়। ইউনিয়ানে influence প্রচণ্ড। একে ক্ষ্যাপালে ওই অনুষ্ঠানে যা যা অনভিপ্রেত ঘটেছে তা বাইরে বেরিয়ে পড়বে। তাই আর কথা না বাড়িয়ে রণে ভঙ্গ দিয়ে নলিনী বাবু পা বাড়ালেন। জর্জ বিশ্বাসও লড়াইটি জিতে মুচকি হেসে আপন পথে এগিয়ে চললেন।

নমস্কারান্তে,
জয়ন্তানুজ ঘোষ
২৬শে জানুয়ারি, ২০২৪

Комментарии

Информация по комментариям в разработке